গ্রামের মেঠো পথ ধরে হেঁটে যাচ্ছিলেন তিনি। পাশে একটি গো-খামার। ইলেকট্রিক ফেন্সিংয়ের মাধ্যমে আটকে রাখা কিছু গরু। সেই দৃশ্যই দেখছিলেন তিনি নিশ্চিন্ত মনে। এমন সময় হঠাৎ করে গরুগুলি প্রায় আলোর সমতুল্য গতিতে ফেন্সের মধ্যে দিয়ে লাফিয়ে চলে এল বাইরে। আশ্চর্যজনকভাবে ইলেকট্রিক শক এড়িয়েই ফেন্স পেরিয়ে গেল তারা। তবে মাঠের অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা প্রতিপালক দেখলেন, প্রতি মুহূর্তে একটি একটি গরু ফেন্স পেরিয়ে চলে যাচ্ছে। অথচ ওই ব্যক্তি এবং প্রতিপালক— দু’জনেই একই ঘটনা দেখছেন।
কী মনে হচ্ছে, মনগড়া কোনো কাহিনি শোনাচ্ছি? না, একেবারেই তেমনটা নয়। আইনস্টাইন এমনটাই দেখেছিলেন স্বপ্নে। আর তার ফলস্বরূপ তৈরি হয়েছিল আপেক্ষিকতা তত্ত্ব। হ্যাঁ, অবাস্তব লাগলেও এমনটাই সত্যি। কিন্তু কীভাবে ঘুমের মধ্যেই এই অসাধ্যসাধন করলেন আইনস্টাইন? এবার সেই তথ্যই সামনে আনলেন বিজ্ঞানীরা।
এই রহস্য উন্মোচনে ‘নো টাইম’-এর তত্ত্ব খাড়া করেছেন বিজ্ঞানীরা। কী এই ‘নো টাইম’? ধরুন এমন একটা সময়, যখন আপনার মস্তিষ্ক রয়েছে সম্পূর্ণ বিশ্রামে। অর্থাৎ, বিশেষ কোনো কাজেই ব্যস্ত নয় আপনার মস্তিষ্ক। চারিদিকে কোনো গোলযোগ নেই, কোলাহলও নেই। শান্ত-স্নিগ্ধ সেই পরিবেশটাই হল ‘নো টাইম’। আর এই ‘নো টাইম’-ই ত্বরান্বিত করে মানুষের উৎপাদনশীলতা বা সৃষ্টিশীলতাকে। স্নায়ুবিদ স্টিভেন কোটলারের মতে, ভোর সাড়ে চারটে থেকে শুরু করে সকাল সাড়ে সাতটা পর্যন্ত সময়টাই সবথেকে উপযোগী ‘নো টাইম’-এর জন্য।
বাংলায় অত্যন্ত প্রচলিত একটি শব্দবন্ধ হল ‘ভোরের স্বপ্ন’। সেই স্বপ্ন নাকি সত্যি হয়ে ধরা দেয় আমাদের জীবনে। সেই তত্ত্ব কতটা ঠিক তা বিতর্কের বিষয়। তবে স্নায়ু-বিজ্ঞানীদের অভিমত ভোর বেলায় সক্রিয় হয়ে ওঠে আমাদের স্নায়ুকোষগুলি। বিশেষত মস্তিষ্কের বাঁ দিকের অংশ। অবচেতন মনের মধ্যে তারা কাজ করা শুরু করে দেয় সেই সময় থেকেই।
আরও পড়ুন
জ্যান্ত বিড়াল দিয়ে তৈরি টেলিফোন! চমকে দিয়েছিলেন দুই মার্কিন বিজ্ঞানী
এর একেবারে বিপরীত মতামতও রয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বলা হয়, একটি যথাযথ দৈনিক রুটিন বজায় রাখা হলে অনেকটাই সতেজ থাকে মস্তিষ্ক। তবে ‘নো টাইম’ তত্ত্ব বলছে বাঁধা-ধরা রুটিন এবং দৈনিক কোনো বিশেষ কাজের অভ্যেস সৃজনশীলতার পরিপন্থী।
আরও পড়ুন
দক্ষিণ এশিয়ায় মুছে যাচ্ছে পার্বত্য বনভূমির অস্তিত্ব, আতঙ্কিত বিজ্ঞানীরা
তবে শুধু একা আইনস্টাইন নয়, ‘নো টাইম’-এর সাফল্য পেয়েছেন একাধিক বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব। তাঁদের মধ্যে আরও একটি অন্যতম নাম হল স্টিভ জোবস। হ্যাঁ, অ্যাপেলের সৃষ্টিকর্তাও এমনভাবেই দিন কাটাতেন একটি দীর্ঘ সময়। উদ্দেশ্যহীনভাবেই বসে থাকতেন বাড়িতে। তাঁর কোনোরকম যোগাযোগ ছিল না বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে। আর তার ফলস্বরূপ পরবর্তীতে এসেছিল ‘অ্যাপেল’।
আরও পড়ুন
৫৪ বছরের ইতিহাসে প্রথম ভারতীয় হিসাবে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান পুরস্কার বঙ্গতনয়ার
আসলে উদ্দেশ্যহীনতাকে আমরা ধরে নিই অযথা সময় নষ্ট বলে। কিন্তু পারতপক্ষে তেমনটা নয় বাস্তবে। এই সময়টাতেই নিজের মতো স্বাধীনভাবে কাজ করে আমাদের মস্তিষ্ক। অব্যাহত থাকে তাঁর চিন্তা-ভাবনার প্রক্রিয়া। দীর্ঘ মেয়াদে ‘অলসতা’-রও যে ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে, সেই বিষয়টাকেই সামনে আনছেন বিজ্ঞানীরা…
Powered by Froala Editor