‘মন্দিরে অ-হিন্দুদের প্রবেশ নিষেধ’। হ্যাঁ, ভারতের বুকেই ছেয়ে গিয়েছে এই ব্যানার। রাতারাতি দেরাদুন শহরের ১৫০টি মন্দিরে এমন নিষেধাজ্ঞা দেখে স্তম্ভিত সকলে। জানা গিয়েছে, ‘হিন্দু যুব বাহিনী’ নামের একটি অতি-দক্ষিণপন্থী সংগঠনের উদ্যোগেই দেরাদুন শহরে এইসমস্ত ব্যানার টাঙানো হয়েছে। এর পিছনে দাসনাদেবী মন্দিরের ঘটনার প্রত্যক্ষ প্রভাব আছে বলেই মনে করছেন অনেকে।
সম্প্রতি গাজিয়াবাদের দাসনায় দাসনাদেবী মন্দিরে ঢুকে এক এক মুসলমান যুবকের জল খাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পরিস্থিতি। মন্দির সূত্রে দাবি করা হয়, সেখানে দেয়ালে লেখা ছিল যে মন্দিরে মুসলমানদের প্রবেশ নিষেধ। তারপরেও যুবক ঢুকে পড়লে পুরোহিতের নেতৃত্বে কয়েকজন তাঁকে নিগ্রহ করেন। এই ঘটনায় অভিযুক্ত পুরোহিত জাতি নরসিংহানন্দের সমর্থনেই দেরাদুনে এই ব্যানার লাগানো হচ্ছে বলে সন্দেহ করেছিলেন অনেকে।
হিন্দু যুব বাহিনীর রাজ্য সম্পাদক জিতু রান্ধওয়ানের বক্তব্যে সেই ইঙ্গিতই আরও স্পষ্ট। তাঁর বক্তব্য, মন্দির সনাতন ধর্মের মানুষদের কাছে শ্রদ্ধার স্থান। শুধুমাত্র সনাতন ধর্মের মানুষদেরই সেখানে প্রবেশাধিকারর থাকা উচিৎ। কিছুদিনের মধ্যেই উত্তরাখণ্ডের সমস্ত মন্দিরে এই নির্দেশিকা ঝোলানো হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। দেবভূমি নামে পরিচিত উত্তরাখণ্ডে মন্দিরের সংখ্যা অগুনতি। আর তার মধ্যে আছে কেদারনাথ, বদ্রিনাথ, গঙ্গোত্রী, যমুনোত্রীর মতো তীর্থস্থানও। শুধুই ভারতীয়রা নয়, দেশ-বিদেশ থেকে মানুষ আসেন এইসব তীর্থ দর্শনে। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে তাঁদেরও পথ রোধ করে হবে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।
অসংখ্য মন্দির, মসজিদ, গুরুদুয়ার আর ধর্মস্থান মিলে ভারতের দীর্ঘ ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে। এর মধ্যেই দেশের ইতিহাস প্রোথিত। আর সেই ইতিহাসের শরিক সমস্ত দেশবাসী। সেখানে এধরণের বিভাজন কাম্য নয় বলেই মনে করছেন অনেকে। ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের মানুষ একে অপরকে শ্রদ্ধা করেন, এটাই ভারতের ঐতিহ্য। তাই হিন্দু যুব বাহিনীর কার্যকলাপ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠছে দেশজুড়ে।
Powered by Froala Editor