কিছুদিন আগেই নোবেল ফাউন্ডেশন জানিয়েছিল, পুরস্কার প্রদানে ছেদ পড়বে না এবছরও। তবে আনুষ্ঠানিক পুরস্কার বিতরণের পরিবর্তে প্রাপকদের বাড়িতেই পৌঁছে দেওয়া হবে সেটি। আর আজ থেকেই শুরু হয়ে গেল প্রাপকদের নাম ঘোষণার পালাও। শারীরবিদ্যা এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিশেষ অবদানের জন্য এবছর যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পেতে চলেছেন ৩ বিজ্ঞানী। তাঁরা হলেন হার্ভে জে অল্টার, মিশেল হাগটন এবং চার্লস এম রাইস।
বর্তমান মহামারী পরিস্থিতিতে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল প্রাপকদের নামের দিকে তাকিয়ে ছিল সারা পৃথিবী। যদিও অনেকেই আশা করেছিলেন যে করোনা ভাইরাস বিষয়ক গবেষণার জন্যই দেওয়া হবে এবারের পুরস্কার। তবে শেষ পর্যন্ত দেওয়া হল অন্য একটি নোভেল ভাইরাসের আবিষ্কারের জন্য। আর সেই ভাইরাস হল হেপাটাইটিস সি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর অন্তত ৭ কোটি মানুষ হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হন। তার মধ্যে ৪ লক্ষ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। মহামারী পরিস্থিতি না হলেও, এই ভাইরাস যে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে এক বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল, সেকথা বলাই বাহুল্য।
ইতিমধ্যে হেপাটাইটিস এ এবং হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের অস্তিত্বের কথা জানা ছিল। নোবেল ফাউন্ডেশনের বক্তব্য অনুযায়ী, এই দুই ভাইরাসের আবিষ্কারও ছিল যুগান্তকারী ঘটনা। ১৯৭৬ সালে বারুখ ব্লুমবার্গকে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এর পরেও এক বিরাট অংশের সংক্রমণের পিছনে প্রকৃত কারণ অধরাই থেকে যায়। আর এই হেপাটাইটিসের সংক্রমণ থেকেই ক্রমশ যকৃতের প্রদাহ এবং ক্যানসারের মতো রোগও ছড়িয়ে পড়ছিল। ষাটের দশকে যখন হেপাটাইটিস বি ভাইরাস আবিষ্কৃত হয়, হার্ভে তখন চিকিৎসাবিজ্ঞানের ছাত্র। তিনি তখন থেকেই আরও একটি ভাইরাসের উপস্থিতির কথা বলে আসছিলেন।
২০০৯ সাল থেকে তিনি বিজ্ঞানী একসঙ্গে গবেষণা শুরু করেন। আর ক্রমশ সেই গবেষণার সূত্রেই নতুন ধরনের ভাইরাসের সন্ধানও পাওয়া গেল। ২০১৬ সালেই মোটামুটি সেই ভাইরাসের চরিত্র ধরতে পেরেছিলেন তাঁরা। অবশেষে পরীক্ষামূলকভাবে প্রমাণিতও হল যে, এই হেপাটাইটিস সি ভাইরাসই যকৃতের বেশিরভাগ দুরারোগ্য রোগের পিছনে দায়ী। চিকিৎসাক্ষেত্রে এই আবিষ্কার যে নতুন দিগন্ত খুলে দিল, তাতে সন্দেহ নেই।
এর মধ্যেই অন্যান্য ক্ষেত্রেও নোবেল প্রাপকদের তালিকা চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে বলেও জানিয়েছে নোবেল ফাউন্ডেশন। আগামীকাল প্রকাশিত হবে পদার্থবিদ্যায় প্রাপকের নাম। আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে অন্যান্য ক্ষেত্রের প্রাপকদের নামও ঘোষণা করা হবে স্টকহোম থেকে। এই মহামারী পরিস্থিতিতে প্রতিটা ক্ষেত্রেই প্রাপকদের নাম যে বিশেষ আলোচনার দাবি রাখে, তাতে সন্দেহ নেই।
ছবিঋণ - নোবেল ফাউন্ডেশন
Powered by Froala Editor