Powered by Froala Editor
দেড় দশকের যুগলবন্দির ইতি, বন্ডের চরিত্রে আর দেখা যাবে না ক্রেগ-কে
১/৯
গত বছরের এপ্রিল মাসেই প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল জেমস বন্ডের (James Bond) ২৭তম চলচ্চিত্র। তবে করোনাভাইরাসের দাপটে প্রিমিয়ার বাতিল করতে বাধ্য হন পরিচালক ক্যারি ফুকুনাগা। বিগত দেড় বছরে একবার নয়, তিন তিনবার পিছিয়েছে প্রকাশের অনুষ্ঠান। এবার শেষ পর্যন্ত অবসান হল সেই দীর্ঘ প্রতীক্ষার। গতকাল প্রিমিয়ারের পর আজই বড়ো পর্দায় দর্শকদের জন্য হাজির হল জেমস বন্ডের সাম্প্রতিকতম সিক্যুয়াল ‘নো টাইম টু ডাই’ (No Time To Die)।
২/৯
বিগত দেড় দশক ধরে সিনে-পর্দায় বন্ডের চরিত্রকে জীবিত করে রেখেছেন অভিনেতা ড্যানিয়েল ক্রেগ (Daniel Craig)। আগের চারটে সিক্যুয়ালের মতো, ‘নো টাইম টু ডাই’-তেও বন্ডের ভূমিকায় দেখা গেছে তাঁকেই। তবে এটিই তাঁর শেষ বন্ড-মুভি, তা কিছুদিন আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন ব্রিটিশ অভিনেতা। বন্ডপ্রেমীদের কাছে যা নিঃসন্দেহে হতাশাজনকই বটে।
৩/৯
২০০৬ সাল। মুক্তি পেয়েছিল ‘রয়্যাল ক্যাসিনো’। সেই প্রথম, বন্ডের চরিত্রে দেখা গিয়েছিল ক্রেগকে। খুব একটা সহজ ছিল না। ’৬২-তে প্রথম বন্ড সিনেমা তৈরির সময় এক শিল্পীকে দিয়ে নিজের মনের মতো বন্ডের প্রতিকৃতি আঁকিয়েছিলেন বন্ড-স্রষ্টা ইয়ন ফ্লেমিং। সেই ছবির সঙ্গে সবথেকে বেশি মিল দেখা গিয়েছিল শন কনেরির। প্রথম বন্ড সিনেমা প্রকাশের পর তাঁকেই আদর্শ ধরে নেওয়া হয়েছিল এই চরিত্রের জন্য। পরবর্তীতে একাধিক অভিনেতা বন্ডের চরিত্র উপস্থাপন করলেও, একরকম যেন অনুসন্ধান চলত কনেরিরই। সেই জায়গায় ক্রেগ কতটা মানিয়ে নিতে পারবেন নিজেকে? এই চর্চাতেই মুখর হয়ে উঠেছিল মিডিয়া।
৪/৯
না, কনেরি হননি ক্রেগ। বরং, তাঁর অভিনয়, অভিব্যক্তি, উচ্চারণ— সবকিছুই ছিল কনেরিকে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় ফেলে দেওয়ার মতোই। সেইসঙ্গে তাঁর শারীরিক গঠন এবং পর্দায় নিষ্ঠুর ‘ঘাতক’ সত্তা আদায় করে নেয় ‘ডবল ও’ স্ট্যাটাস। সমালোচকদের চমকে দিয়েই বন্ড-ফিল্মের ইতিহাসে এক নতুন আর্কিটাইপ হয়ে উঠেছিলেন ক্রেগ। অস্বীকার করার জায়গা নেই, আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে বন্ডের চরিত্রে তাঁকে ছাড়া অন্য কাউকে ভাবা খানিকটা কষ্টসাধ্যই বটে।
৫/৯
কিন্তু মজার বিষয় হল, আদতে কোনোদিনই ডবল ও সেভেন হতে চাননি ড্যানিয়েল ক্রেগ। এমনকি রয়্যাল ক্যাসিনোর জন্য তাঁর কাছে প্রথম প্রস্তাব আসার পর প্রযোজককে ফিরিয়েও দিয়েছিলেন তিনি। কেননা, জেমস বন্ড আদ্যন্ত বাণিজ্যিক সিনেমা। অন্যদিকে ড্যানিয়েল ক্রেগ মূলত আর্ট ফিল্মের অভিনেতা। ফলত, এমন একটি চরিত্রের জুতোয় পা গলানোর কোনো ইচ্ছেই ছিল না ক্রেগের।
৬/৯
তবে বন্ড হিসাবে ক্রেগকে পর্দায় আনতে এককথায় বদ্ধপরিকর ছিলেন প্রযোজক বারবারা ব্রোকলি এবং পরিচালক মার্টিন ক্যাম্পবেল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য দীর্ঘ আলোচনার পর অভিনয় করতে রাজি হন ক্রেগ। শুরু হয় বন্ড-মুভির নতুন একটি অধ্যায়। সামান্য কিছু বদলও আনা হয় বন্ডের চরিত্রে। বন্ডের ভায়োলেন্ট, নির্দয় চরিত্রের মধ্যেও ফুটিয়ে তোলা হয় প্রেমিক সত্তা।
৭/৯
‘কোয়ান্টাম অফ সোলেস’, ‘স্কাইফল’ কিংবা ‘স্পেকটর’— বন্ডের পরবর্তী সিক্যুয়ালগুলিতেও বজায় ছিল এই ধারা। ক্রেগের বন্ড শুধুমাত্র ‘কিল-মেশিন’ নয়, তাঁর অভিনয়ে বার বার গৌণ হয়েও প্রাধান্য পেয়েছে আবেগ। এখনও পর্যন্ত বন্ডের চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রায় ১২ জন অভিনেতা। কিন্তু এই জায়গাটায় তাঁদের সকলের থেকেই নিজেকে আলাদা করে তুলেছিলেন ড্যানিয়েল ক্রেগ।
৮/৯
গতকাল লন্ডনের খ্যাতনামা রয়্যাল অ্যালবার্ট সিনেমা হলে প্রদর্শিত হয় ‘নো টাইম টু ডাই’-এর প্রিমিয়ার। হাজির ছিলেন ক্রেগও। তবে প্রথাগত কালো স্যুট আর সাদা ট্যাক্সিডোরের বদলে এদিন তাঁকে দেখা গেল গোলাপি ব্লেজারে। প্রিমিয়ারের দিন পোশাক বদল করে যেন আরও একবার ক্রেগ মনে করিয়ে দিলেন, ‘নো টাইম টু ডাই’-ই তাঁর বন্ড-ক্যারিয়ারের শেষ সিনেমা।
৯/৯
কিন্তু পরবর্তীতে কে জায়গা করে নেবেন এই শূন্যস্থানে? সত্যি কথা বলতে এখনও কোনো বিকল্পের কথা ভেবে উঠতে পারেননি কেউ-ই। অভিনয় করতে ইচ্ছেপ্রকাশ করেছেন ক্রিস হেমসওয়ার্থ, টম হিডেলস্টোন, হেনরি ক্যাভিলের মতো একাধিক তারকা। তালিকায় রয়েছে টম হার্ডি, রিচার্ড ম্যাডেন, লুক ইভানসরাও। অন্যদিকে বন্ডভক্তদের একাংশের দাবি লিঙ্গসাম্য ফেরাতে এবার বন্ডের চরিত্রে দেখানো হোক কোনো নারীকে। তবে পরবর্তী অভিনেতা, যে-ই হোন না কেন, ক্রেগের ছেড়ে যাওয়া জুতোয় পা গলানোটা তাঁর কাছে বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো।