আফ্রিকার একটি ছোট্ট দেশ কেনিয়া। অর্থনৈতিক দিক থেকে তার স্থান অনেক দেশের পিছনে। কিন্তু সেখানেই ছড়িয়ে আছে অসংখ্য প্রতিভা। ৯ বছরের ছোট্ট স্টিফেনের আবিষ্কারই মুগ্ধ সারা বিশ্বের নেটিজেনরা। তার একটি ফেসবুক পোস্ট থেকে সবাই জানতে পারে তার আবিষ্কারের কথা। এমন এক যন্ত্র, যাকে স্পর্শ না করেই হাত ধোয়া যায়। অথচ তার খরচও বেশি নয়। প্রায় সমস্ত মানুষের সামর্থ্যের মধ্যে এমন যন্ত্র আবিষ্কারের পুরস্কারও পেতে চলেছে স্টিফেন ওয়ামুকোটা। সম্প্রতি কেনিয়া দেশের রাষ্ট্রপতি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে তার নাম। খুব শিগগিরই উহুরু কেনিয়াত্তার হাত থেকে উজালেন্ডো অর্থাৎ দেশপ্রেমিক উপাধি পেতে চলেছে ৯ বছরের ছোট্ট ছেলেটি।
ছোটো থেকে বড়ো - পৃথিবীর প্রত্যেক মানুষের এখন সবচেয়ে বড় আতঙ্ক করোনা ভাইরাস। এই মারণ ভাইরাসের সংক্রমণ এড়ানোর উপায় কী? সেকথাই ভাবছেন সকলে। আপাতত চিকিৎসকরা মাস্ক, গ্লাভসের মতো সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবহার এবং পরিচ্ছন্নতার উপরেই জোর দিচ্ছেন। তাছাড়া কোনো ব্যবস্থা নেই এখনও। কিন্তু পরিচ্ছন্নতা মানেই তো সাবান বা হ্যান্ড ওয়াশের ব্যবহার। আর সেখান থেকেও তো সংক্রমিত ব্যক্তির শরীরের ভাইরাস পৌঁছে যেতে পারে সুস্থ মানুষের শরীরে। তাহলে উপায় কী? এমন কোনো যন্ত্র কি বানানো সম্ভব নয়, যাতে যন্ত্র থেকে হ্যান্ড ওয়াশ বেরোবে, কিন্তু সেই যন্ত্র স্পর্শ করার দরকার হবে না! লাইট সেন্সিং প্রযুক্তির সাহায্যে অবশ্য এমন যন্ত্র তৈরি হয়েছে আগেই। কিন্তু তার দাম এমন যে সাধারণ মানুষের ব্যবহারের সুযোগ নেই। তাই সস্তায় এমন যন্ত্র তৈরি করল স্টিফেন।
কেনিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে স্টিফেন। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিংএর দিকে তার আগ্রহ বরাবর। স্বাভাবিকভাবেই একদিন টিভিতে গাড়ি তৈরির প্রযুক্তি দেখতে দেখতে মনে হল, গাড়ির অ্যাক্সেলারেটরের মতো একটি লিভার আর কীধরনের কাজে ব্যবহার হতে পারে? আর সময়টা যখন মহামারী করোনার, তখন প্রত্যেক আবিষ্কার কোথাও গিয়ে মিলে যাবে একটাই যুদ্ধের প্রস্তুতিতে। তাই স্টিফেন যে যন্ত্র তৈরি করল, তাতে হাত দিতে হয় না। পা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করলেই হ্যান্ড ওয়াশ এবং জল বেরিয়ে আসে। ফলে সংক্রমণের সম্ভবনা অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারে এই যন্ত্র।
এদিকে ব্যবসার কাজ সেরে স্টিফেন বাবা জেমস ওয়ামুকোটা ফিরে এসে দেখেন তাঁর কাঠের গোডাউন থেকে কাঠ বের করে নিয়ে অদ্ভুত এই যন্ত্র বানিয়ে ফেলেছে ৯ বছরের ছেলেটি। যন্ত্রটির কাজ দেখে মুগ্ধ তিনিও। যদিও আবার পরিশ্রম করে কাঠ আনতে যেতে হবে, তাই খানিকটা বিরক্তি তো ছিলই। তবে আজ সেই আবিষ্কার যখন দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পুরস্কারের দাবিদার, তখন আর কোনো বিরক্তি নেই মিস্টার ওয়ামুকোটার মনের মধ্যে। বরং এমন ছেলের জন্ম দিতে পেরে গর্ব অনুভব করছেন তিনি। অন্যদিকে স্টিফেনের বক্তব্য, এই লড়াইতে প্রত্যেকের অংশগ্রহণ ভীষণ জরুরি। আর তার এই আবিষ্কার কেনিয়া তো বটেই, সারা পৃথিবীর জন্যই প্রয়োজনীয়। কারণ, গোটা পৃথিবীজুড়েই চলছে মারণ ভাইরাসের তাণ্ডব।
Powered by Froala Editor