বৃহস্পতিবার তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে সি রাও জানান, সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কেউ যেন পায়ে হেঁটে ফেরার সিদ্ধান্ত না নেন। আর ঠিক সেইদিন হায়দ্রাবাদ শহরের উপকণ্ঠে গোরেকুন্টা গ্রামের একটি কুয়ো থেকে উদ্ধার হল ৪ জনের দেহ। শুক্রবার আরও ৫ জনের দেহ মিলল একই কুয়ো থেকে। এঁরা কেউই আর ঘরে ফিরতে পারলেন না। মৃতদের মধ্যে ৬ জন পশ্চিমবঙ্গ থেকে তেলেঙ্গানায় গিয়েছিলেন। তাঁরা একই পরিবারের সদস্য। আর দুজন বিহারের নাগরিক এবং একজন ত্রিপুরার। তবে ঠিক কী কারণে একসঙ্গে এতজন পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হল, সেই অনুসন্ধানে এখনও সম্পূর্ণ ধোঁয়াশার মধ্যে ওয়ারাঙ্গেল পুলিশ।
প্রাথমিক ময়না তদন্তের পর মৃতদেহ থেকে বিষক্রিয়া বা কোনো বাহ্যিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তাই আত্মহত্যার দিকেই যুক্তি জোরালো হচ্ছে। পুলিশের অনুমান লকডাউনের জেরে কাজ হারিয়ে এবং বেতনের অভাবে অর্থকষ্টের মধ্যে যেতে হচ্ছিল প্রত্যেককেই। আর এই অবস্থা সহ্য করতে না পেরেই তাঁরা আত্মহত্যা করেছেন।
বৃহস্পতিবার এই কুয়োর মধ্যে চারটি মৃতদেহ খুঁজে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। এঁরা হলেন পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসী মকসুদ, তাঁর স্ত্রী নিশা, তাঁদের জন্য বুসরা খাতুন এবং বুসরার তিন বছরের সন্তান। শুক্রবার সেখানেই পাওয়া যায় মকসুদের দুই পুত্র শাহবাজ ও সোহেলের মৃতদেহ। এবং আরও তিন পরিযায়ী শ্রমিকের দেহ। শ্যাম ও শ্রীরাম বিহারের বাসিন্দা এবং শাকিল ত্রিপুরার। মকসুদ গত কুড়ি বছর ধরে হায়দ্রাবাদ শহরের কাছে একটি জুটমিলে কাজ করতেন বলে জানা গিয়েছে। মৃতদেহগুলি পাওয়া যায় সেই জুটমিল থেকে কয়েক হাত দূরেই।
প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যার সম্ভবনা জোরালো হয়ে উঠলেও আত্মহত্যার মতো মানসিক অবস্থা তাঁদের আদৌ ছিল কিনা, সেবিষয়ে সন্দেহ থেকে যায়। লকডাউনের ফলে কাজ হারালেও স্থানীয় এক দোকানদারের গুদামঘরে আশ্রয় পান প্রত্যেকেই। সেইসঙ্গে মকসুদের পরিবারের হাতে কিছু অর্থসাহায্যও তুলে দিয়েছিলেন জুটমিলের মালিক। এমনকি বুধবার সন্ধ্যের পর স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তিকে নিমন্ত্রণ করে বুসরার ছেলের জন্মদিন উদযাপন করেন মকসুদ পরিবার। তাই স্বাভাবিকভাবেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ ঘিরে উঠছে নানা সম্ভবনা। স্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যেও শুরু হয়েছে জল্পনা। ইতিমধ্যে ইয়াকুব পাশা নামে এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। স্থানীয় সূত্রে খবর, এই ব্যক্তির সঙ্গে বুসরার একটি অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। মৃত্যুর সঙ্গে এই ঘটনার ঘনিষ্ট যোগাযোগ থাকতে পারে বলে অনুমান পুলিশের।
অবশ্য তারপরেও অভাবের তাড়নায় আত্মহত্যার বিষয়টি উড়িয়ে দিতে রাজি নন ওয়ারাঙ্গেল পুলিশ। সাম্প্রতিক সময়ে নানারকম বিপদের মধ্যে এগিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে পরিযায়ী শ্রমিকদের। কর্মহীনতা এবং অর্থকষ্ট থেকে তৈরি হওয়া হতাশার জেরেই এই সমস্ত ঘটনা ঘটেছে। কোথাও পথের ক্লান্তিতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ঘরে ফিরতে চাওয়া পরিযায়ী শ্রমিক, কোথাও পথদূর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যেই তেলেঙ্গানার এই ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নাও হতে পারে। দেশের সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিকের জীবনই তো এই সংকটের দিনে এক সুতোয় বাঁধা।