১৯৬২ সাল। কিংবদন্তি মার্কিন কমিক আর্টিস্ট স্ট্যান লি-র হাতে জন্ম নিয়েছিল এক তরুণ সুপারহিরো। স্পাইডারম্যান। শুধু মার্কিন মুলুকই নয়, অল্প সময়ের মধ্যে গোটা বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়েছিল তার জনপ্রিয়তা। ছ’দশক পেরিয়ে আসার পরেও বয়স বাড়েনি স্পাইডারম্যানের (Spider-Man)। তার সুপার পাওয়ারে মজে রয়েছে বর্তমান প্রজন্মও। তবে এই জনপ্রিয় সুপারহিরোকে রাস্তা থেকে আবর্জনা কুড়াতে দেখলে, খানিকটা অবাক হতেই হয়।
হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। পথে পথে ঘুরে আবর্জনা পরিষ্কার করছে স্পাইডারম্যান। নাইজেরিয়ার (Nigeria) ওসোগবোর রাস্তায় প্রায় প্রতিদিনই দেখা যায় এই দৃশ্য। না, পিটার পার্কার নয়। এই স্পাইডি কস্টিউমের পিছনে লুকিয়ে থাকা মানুষটির নাম জোনাথন ওলাকুনলে (Jonathan Olakunle)। স্ট্যান লি রচিত স্পাইডারম্যানের মতো কোনো সুপারপাওয়ার নেই তাঁর ঠিকই। তা সত্ত্বেও বর্তমান সমাজের নায়ক হয়ে উঠেছেন এই মধ্যবয়সি নাইজেরীয় ব্যক্তি।
আজ থেকে প্রায় দু’দশক আগের কথা। ২০০৪ সালে নাইজেরিয়ার একটি পরিবেশ সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন জোনাথন। সেই সম্মেলনেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে প্রতি সপ্তাহেই নাইজেরিয়ার মূল শহরগুলিতে অভিযান চালাবেন পরিবেশ ও সমাজকর্মীরা। কিন্তু কয়েকদিন চলার পরেই বন্ধ হয়ে যায় সেই প্রকল্প। তবে থেমে থাকেননি জোনাথন। ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়েই শুরু করেন আবর্জনা, বিশেষত প্লাস্টিক পরিষ্কার অভিযান।
অবশ্য সে-সময় স্পাইডারম্যান কস্টিউমে দেখা যেত না তাঁকে। সত্যি কথা বলতে, নাইজেরিয়া তৃতীয় বিশ্বের দেশ হওয়ায় সেখানে স্পাইডারম্যানের আগমন ঘটে অনেক পরে। বিগত এক দশকে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে তার জনপ্রিয়তা। আর সেই কারণেই এই সুপারহিরোর কস্টিউম বেছে নিয়েছেন জোনাথন। লক্ষ্য, সাধারণ মানুষ এবং তরুণ প্রজন্মের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। জোনাথনের বিশ্বাস, এই লড়াই একার নয়। সাধারণ মানুষকে সহযোদ্ধা হিসাবে না পেলে বৃথা যাবে এই গোটা পরিশ্রম। তাই আবর্জনা সংগ্রহ অভিযানের ফাঁকে সুযোগ পেলেই কচিকাচাদের সামনে পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের নানান ক্ষতিকর প্রভাব তুলে ধরেন তিনি। জনসচেতনার বীজ রোপণ করেন সাধারণ মানুষের মধ্যে।
আরও পড়ুন
শুধুই মার্ভেল-ডিসি নয়, পর্দা কাঁপিয়েছেন একডজন ভারতীয় সুপারহিরোও
ব্রিটেন, আমেরিকা, জার্মানির মতো উন্নত দেশগুলিতে যত্রতত্র আবর্জনা ফেলা কার্যত অপরাধ। দেশের নাগরিকরা তো বটেই, পর্যটকরাও রাস্তাঘাটে আবর্জনা ফেলেন না আইনের কারণেই। নাইজেরিয়াতেও এই একই রকম আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে আসছেন জোনাথন। সে আরও এক অন্য গল্প। নিজের জীবিকা, পরিবার, পরিবেশকর্মীর দায়িত্ব সামলেও পরিবেশ সংক্রান্ত আইনে বদল আনতে লড়াই করে যাচ্ছেন তিনি। স্পাইডারম্যানের মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে এভাবেই কখন যেন বাস্তবের নায়ক হয়ে উঠেছেন নাইজেরিয়ার জোনাথন…
আরও পড়ুন
সুপারহিট সিনেমার পরেও সুযোগ দেননি ছেলেকে, রাজ কাপুরের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে রাজীবের
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
স্পাইডারম্যান হোক বা হাল্ক – শৈশবের ‘সুপারহিরো’দের জন্ম দিয়েছিলেন যিনি