“লকডাউনের প্রথম থেকেই মানুষকে উপযুক্ত কাজের পরিবেশ দেওয়ার বিষয়ে নানা ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে এসেছি আমরা। প্রতিটা পরিকল্পনাই কমবেশি সফল। কিন্তু সেগুলো সবই সাময়িক সমাধানের কথা মাথায় রেখে ভাবা হয়েছিল। একটা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হিসাবে আমরা এই ওয়ার্ক-পডের কথা ভেবেছি।” বলছিলেন হিডকো-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর দেবাশিস সেন। সম্প্রতি নিউটাউনের বেশ কিছু পরিত্যক্ত অফিস অঞ্চল ঘিরে তৈরি করা হয়েছে এই ওয়ার্ক-পড। আগামী ১৩ আগস্ট থেকে প্রত্যেকের জন্য খুলে দেওয়া হবে সেগুলি। ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-এর পরিবর্তে সেখানে বসেই যাবতীয় কাজ করতে পারবেন যে কোনো সংস্থার কর্মচারীরা।
কী এই ওয়ার্ক-পড? আসলে ছোট ছোট কিছু কাঁচের তৈরি কিউবিকল। তার মধ্যেই থাকবে বিদ্যুৎসংযোগ থেকে শুরু করে ইন্টারনেটের সুবিধা, সবকিছুই। গত দেড় বছরের অতিমারী পরিস্থিতিতে একটা বিষয় পরিষ্কার বোঝা গিয়েছে, বাড়িতে বসে কাজ করার পদ্ধতি সম্পূর্ণ কার্যকর নয়। বিশেষ করে ভারতের মতো দেশে, যেখানে ছোটো ছোটো বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মধ্যে অনেকজন সদস্য বাস করেন। দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি যখনই কোনো অনলাইন মিটিং শুরু হয়, তখনই সমস্যায় পড়েন অনেকে। এছাড়া যাঁদের ছোটো ছেলেমেয়ে আছে, তাঁদের সমস্যা আরও খানিকটা বেশি। ফলে অফিসে বসে কাজের বিকল্প কখনোই বাড়িতে বসে হতে পারে না।
এই সমস্যার সমাধানের জন্য গতবছরের শেষদিকেই নিউটাউনে বেশ কিছু পার্কে অস্থায়ী কর্মক্ষেত্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছিল হিডকো কর্তৃপক্ষ। সেখানে ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ পরিষেবার পাশাপাশি ছিল কফি, স্ন্যাকস এবং অস্থায়ী টয়লেটের ব্যবস্থাও। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল এই পরিষেবা। আর সেই সাফল্যের কথা মাথায় রেখেই এবার ওয়ার্ক-পড তৈরির পরিকল্পনা হিডকোর। প্রাথমিকভাবে নির্দিষ্ট কেন্দ্রে গিয়েই ঘণ্টাভিত্তিক বা দৈনিক টিকিট কাটা যাবে। তবে পরে অনলাইন বুকিং-এর ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন দেবাশিস সেন। তাঁর কথায়, “রোজ নির্দিষ্ট সময়ে নিয়ম করে সাজপোশাক করে অফিসে যাওয়া আমাদের সংস্কৃতির অঙ্গ। তাকে রাতারাতি বদলে ফেলা সম্ভব নয়। অথচ অতিমারী পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে সমস্ত অফিস খোলাও সম্ভব নয়। এখানে সামাজিক দূরত্বের সমস্ত নিয়ম বজায় রেখেই কাজ করতে পারবেন মানুষ। এবং তাও নির্দিষ্ট কাজের সময় মেনেই।” বাড়ির এবং অফিসের কাজের সময় ভাগ করতে যাঁরা হিমশিম খাচ্ছেন, তাঁদের কাছে এই ওয়ার্ক-পড যে বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে, সে-বিষয়ে আশাবাদী হিডকো কর্তৃপক্ষ।
Powered by Froala Editor