প্রকৃতি-পরিবেশের কাছে এই মুহূর্তে অন্যতম বড় আতঙ্ক প্লাস্টিকজাত বর্জ্যপদর্থ। ব্যবহারের পর প্লাস্টিক ফেলে দিলে তা জলে মেশে না, মাটিতেও মেশে না। বরং বাস্তুতন্ত্রের যথেষ্ট ক্ষতি করে। প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার করার কথা অনেকদিন ধরেই বলছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু তাতেও যথেষ্ট সমস্যা রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রযুক্তি খাতেই যে বিপুল খরচ হয়ে যায়, তাতে আর বাণিজ্যিক ব্যবহারের অবকাশ থাকে না। তাছাড়া প্রচণ্ড তাপে প্লাস্টিক গলিয়ে ফেলার পরও তার বেশিরভাগ অংশই আর ব্যবহার করা যায় না। তাহলে উপায়? উপায় আছে প্রকৃতিতেই। আর বিজ্ঞানীরা অবশেষে সেই উপায় খুঁজেও পেয়েছেন।
গাছের পাতা ঝরে পড়ার পর ক্রমশ মাটিতে মিশে যায়। এই সময় বেশ কিছু নতুন উৎসেচক তৈরি হয় পাতার মধ্যে। যার প্রভাবে বিভিন্ন কোষের জটিল গঠন ভেঙে যায়। তবে শুধু গাছের পাতাই নয়, সেই উৎসেচকের সাহায্যে প্লাস্টিক অণুর গঠনও ভেঙে ফেলা যায়। আর এই কাজে সময় লাগে মাত্র কয়েক ঘণ্টা। ফ্রান্সের কারবায়োস কোম্পানির গবেষকরা সন্ধান পেয়েছেন সেই উৎসেচকের।
এই যুগান্তকারী আবিষ্কার আগামী দিনে পরিবেশ রক্ষার কাজে তো বটেই, শিল্প-উৎপাদনের ক্ষেত্রেও বৈপ্লবিক পটপরিবর্তন ঘটাতে চলেছে বলে মনে করছেন কোম্পানির আধিকারিকরা। মাত্র ১০ ঘণ্টার মধ্যেই পেট পলিমারের ৯০ শতাংশ অণু ভেঙে মনোমারে পরিণত করতে পারে এই উৎসেচক। আর এভাবে নতুন প্লাস্টিক পদার্থ তৈরি করলে খরচও অনেকটাই কম হবে বলে আশা করছেন তাঁরা। আগামী ৫ বছরের মধ্যেই এই প্রযুক্তি বাজারে এসে যাবে বলেও মনে করছেন আধিকারিকরা।
কারবায়োস কোম্পানির সঙ্গে এই উদ্যোগে হাত মেলাতে চলেছে পেপসি এবং লরিয়েল কোম্পানি। এই দুই কোম্পানি সারা পৃথিবী জুড়ে ব্যবহৃত অধিকাংশ পেট বোতল তৈরি করে। আর আগামীতে সেই সমস্ত বোতল যদি পুরনো প্লাস্টিক ব্যবহার করেই তৈরি হয়, তাহলে প্লাস্টিক দূষণের প্রভাবের হাত থেকে পৃথিবীর অনেকটাই বাঁচানো সম্ভব হবে।
প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণার সাক্ষী থেকেছে বিগত দশক। অনেক নতুন প্রযুক্তিই আবিষ্কার হয়েছে। কিন্তু তার বিপুল পরিমাণ খরচের জন্য শেষ পর্যন্ত বাস্তব ক্ষেত্রে ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। এখন এই নতুন আবিষ্কৃত উৎসেচকের ব্যবহার বাস্তবে কতটা জনপ্রিয় হয়ে উঠবে, সেদিকেই তাকিয়ে আছেন সবাই।