ধরুন সকালে ঘুম ভাঙল এক অচেনা পাখির ডাকে। খোঁজ নিয়ে জানলেন, সেই পাখির নাম শুনেছেন বহুবার। পুরনো কবিতায় বা গানে। অবাক হবেন নিশ্চই। সঙ্গে ঘিরে ধরবে একরাশ নস্টালজিয়া। ঠিক এমনই অনুভূতি হয়েছে নিউজিল্যান্ডের মানুষের। রাজধানী ওয়েলিংটন শহরের মানুষের হঠাৎ ঘুম ভাঙল হারিয়ে যাওয়া হিহি পাখির ডাকে। অথচ বিগত প্রায় দেড় শতক ধরে এই পাখির সাথে পরিচয় ছিল না মানুষের। হিহি সংরক্ষণ নিউজিল্যান্ডের প্রকৃতি পরিবেশ সংরক্ষণের সামনে এক বিরাট মাইলফলক। শুধুই হিহি নয়, নগর পরিকল্পনার মধ্যেই সবুজায়নের এক ব্যতিক্রমী প্রকল্প নিয়ে হাজির হয়েছে নিউজিল্যান্ড সরকার। আর এই পরিকল্পনা কয়েক দশকের নয়। আগামী ৫০০ বছরের লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে এগোচ্ছে নিউজিল্যান্ড।
ওয়েলিংটন শহরের বুকে ১৯৯৯ সালে তৈরি হয় জিল্যান্ডিয়া অভয়ারণ্য। এই অভয়ারণ্য পরিচিত আর পাঁচটা অভয়ারণ্যের মতো নয়। কোনো একটি বা দুটি প্রজাতিকে নয়, বরং সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আস্ত একটা বাস্ততন্ত্রকে। শিকারী প্রাণীদের হাত থেকে বিপন্ন প্রাণীদের রক্ষা করার পরিকল্পনা তো ছিলই। যে হিহি পাখির মাত্র কয়েকটি সদস্য বেঁচে ছিল সেদিন, তাদের থেকেই আজ তৈরি হয়েছে অন্তত ১০০ সদস্যের একটি পরিবার। তবে এখানেই শেষ নয়। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অভয়ারণ্যে কাঁটাতারে বন্দি থেকে একটি প্রজাতির সংখ্যা বাড়লেই তাকে নিরাপদ বলে ঘোষণা করা সম্ভব নয়। বরং তাকে পরিবর্তিত নগর পরিকাঠামোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। বলা ভালো নগর পরিকাঠামোকেই সমস্ত প্রাণীর জন্য নিরাপদ করে তুলতে হবে।
ইতিমধ্যে এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে রাজপথের মাঝ দিয়েই গড়ে তোলা হয়েছে সবুজ বনভূমি। ছোটো ছোটো শৌখিন গাছ নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি বন্য গাছে ছেয়ে ফেলা হয়েছে ওয়েলিংটন শহর। কোনো কোনো গাছের আয়ু ৫০০ থেকে ১০০০ বছর। নগরায়ণ বর্তমান সময়ের এক অপরিহার্য অঙ্গ। আগামী ৩ দশকের মধ্যে সারা পৃথিবীর দুই তৃতীয়াংশ মানুষ গ্রামের বসবাস ছেড়ে শহরে আশ্রয় নেবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। ফলে শহরের পরিধিও বাড়াতে হবে। নতুন নতুন শহর গড়ে তুলতে হবে। তার মধ্যেই বাঁচিয়ে রাখতে হবে পরিবেশকেও। নিউজিল্যান্ডের ৬৯ শতাংশ মানুষ শহরবাসী। রাজধানী ওয়েলিংটনেই বসবাস ২ লক্ষ মানুষের। সারা পৃথিবীতে নিউজিল্যান্ডেই সবচেয়ে দ্রুত গতিতে নগরায়ণ হয়েছে বলে মনে করা হয়। সেখানেই যদি এমন উদ্যোগ সফল হতে পারে, তাহলে তা পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়ে এক নিশ্চিত মাইলফলক। আগামীদিনে সারা পৃথিবীকেই পথ দেখাবে নিউজিল্যান্ড।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশ বাঁচাতে স্কুল ধর্মঘটের ডাক ৫০ হাজার পড়ুয়ার