সদ্য পেরিয়ে যাওয়া নির্বাচনে সাংসদ হিসাবে তাঁকে বেছে নিয়েছেন সাধারণ মানুষ। এবার শপথ গ্রহণের পালা। আর সেখানেই উপস্থিত সকলকে চমকে দিলেন তিনি। স্পষ্ট ঝরঝরে সংস্কৃত উচ্চারণেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলেন প্রশাসনিক দায়িত্বে। তবে যা ভাবছেন তেমনটা নয়। ভারত থেকে বহু দূরে নিউজিল্যান্ডের পার্লামেন্ট সম্প্রতি ঘটল এমনটা। ইতিহাস তৈরি করলেন নিউজিল্যান্ডের ভারতীয় বংশোদ্ভূত সাংসদ ডঃ গৌরব শর্মা।
প্রধানমন্ত্রী জ্যাকিন্ডা অ্যাডার্নের লেবার পার্টির হয়েই নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। ৪৩৮৬ ভোটে পরাজিত হন বিপক্ষ ন্যাশনাল পার্টির প্রার্থী টিম ম্যাকিনডোয়। বুধবার পশ্চিম হ্যামিল্টন প্রদেশের দায়িত্ব গ্রহণ করেন গৌরব শর্মা। প্রথমে নিউজিল্যান্ডের আদি ভূমিপুত্রদের কথিত মাওরি ভাষায় এবং তারপর সংস্কৃত ভাষায় করেন শপথপাঠ।
নিউজিল্যান্ডের এই ৩৩ বছর বয়সী নব-নির্বাচিত পার্লামেন্ট সদস্যের শিকড় রয়েছে ভারতেই। হিমাচলপ্রদেশের হামিরপুর জেলাতেই তো জন্ম নেওয়া। তারপর দেশবদল। কিন্তু শিকড়ের টান কি অত সহজে ভোলা যায়? নিউজিল্যান্ড এবং ভারত— দুই দেশের সংস্কৃতির প্রতিই যে তাঁর রয়েছে গভীর শ্রদ্ধা, তাই বুঝিয়ে দিলেন তিনি।
তখন বছর দশেক বয়স। নিউজিল্যান্ডে বসতিস্থাপনের পর নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল পরিবারকে। আর্থিক অনটন পৌঁছেছিল চরমে। শুরুর চার মাস কোনো চাকরিও ছিল না তাঁর বাবার। তবে সেই জায়গা থেকেই লড়াই করে গেছেন গৌরব শর্মা। কষ্ট করেই পড়েছেন চিকিৎসাবিজ্ঞান। বর্তমানে চিকিৎসার পেশাতেই যুক্ত তিনি নিউজিল্যান্ডে। সেই সঙ্গে সমাজসেবার জন্য রাজনীতিকে বেছে নেওয়া বলেই জানাচ্ছেন তিনি।
কিন্তু নিজের পাহাড়ি মাতৃভাষা কিংবা হিন্দি ছেড়ে সংস্কৃত কেন হঠাৎ? এমনই প্রশ্নের জবাবে ডঃ গৌরব শর্মা জানিয়েছেন, অগণিত ভাষা ছড়িয়ে রয়েছে ভারতের ভূখণ্ডে। সব না জানলেও, প্রতিটির প্রতিই শ্রদ্ধাশীল তিনি। তবে তার মধ্যে কোনো একটি ভাষাকে বেছে নেওয়া আহত করতে পারে ভিন্নভাষীদের। সেটাই স্বাভাবিক বলে অভিমত তাঁর। তাই ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রচলিত পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন ভাষা সংস্কৃতেই শপথ গ্রহণ করেছেন তিনি। গৌরব শর্মার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের ভারতীয় হাইকমিশনার মুক্তেশ পারদেশী। সেইসঙ্গে উচ্ছ্বসিত নেটিজেনরাও শুভেচ্ছাবার্তায় ভাসিয়েছেন নব-নির্বাচিত কিউয়ি সাংসদকে...
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
অসুরপূজা নিয়ে ঘোর বিতর্ক; দুর্গা-মহিষ দ্বন্দ্ব সম্পর্কে কী কী বলে আবহমান সংস্কৃতি?