লেলিহান আগুনে পুড়ছে অস্ট্রেলিয়া, রেহাই নেই প্রতিবেশী নিউজিল্যান্ডেরও

সাম্প্রতিককালে পৃথিবী যেন আগুনের খেলায় মেতে উঠেছে। আমাজন, কঙ্গোর পর, বেশ কয়েকমাস ধরেই জ্বলছে অস্ট্রেলিয়া। আগুনের কবল থেকে রেহাই পায়নি এই ছোট্ট দেশটিও। প্রত্যেক বছরই আগুন গ্রাস করে অস্ট্রেলিয়ার বনাঞ্চলকে, কিন্তু এবার কিছুতেই কমছে না তার ভয়াবহতা। দক্ষিণপূর্ব উপকূলবর্তী অঞ্চলে ক্ষয়ক্ষতির হার খুব বেশি। ইতিমধ্যেই অস্ট্রেলিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে মারা গেছেন আটজন মানুষ। বনাঞ্চলে আগুনের মাত্রা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘর ছাড়া হাজার হাজার মানুষ। ঘন ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে অস্ট্রেলিয়ার অধিকাংশ শহরের আকাশ। রেহাই পায়নি বন্যপশুরাও। আগুনের গ্রাসে মৃত্যু হয়েছে অসংখ্য বন্যপ্রাণীর। নিউ সাউথ ওয়েলসের দক্ষিণ পূর্ব অংশে ইতিমধ্যেই জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। আল্পাইন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে আগুন। মৃত্যু হয়েছে বহু মানুষের, হদিশ নেই আরও অনেকের।

অন্যদিকে, আগুন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে চলেছে সে-দেশের তাপমাত্রাও। নতুন বছরের শুরুতেই যেন এক বিপজ্জনক সময়ের সম্মুখীন অস্ট্রেলীয়রা। আবহাওয়া আরও খারাপ হতে পারে বলে জানিয়েছে সে-দেশের আবহাওয়া দপ্তর। গাড়ির তেল ভরতে ছুটে আসছেন হাজার হাজার মানুষ, কিন্তু গ্যাস স্টেশনগুলিতে ফুরিয়েছে গ্যাস বা তেলের ভাণ্ডার। ভিক্টোরিয়ার ছয়টি অঞ্চলকে ‘স্টেট অফ ডিজাস্টার’ বলে ঘোষণা করেছেন ড্যানিয়েক অ্যান্ড্রুজ। এলাকা খালি করার চেষ্টা চলছে দ্রুত, কিন্তু আগুন কমাবার কোনও লক্ষণই দেখতে পাচ্ছে না সরকার। তাসমানিয়ার সরকারি হাসপাতালের বাইরেও জ্বলছে আগুন। মূলত বহু বছর ধরেই অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে খরা থাকায়, শুখা ভূমিতে সহজেই আগুন ছড়িয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই।

অস্ট্রেলিয়ার এই আগুনের কবল থেকে বাদ পড়েনি নিউজিল্যান্ডও। এমনকি নিউজিল্যান্ডের হিমবাহের রং সাদা থেকে খয়েরি হয়ে গেছে এই আগুনে। অন্তত ৩০ শতাংশ দ্রুত হারে গলবে হিমবাহ, এমনই ধারণা গবেষকদের। নিউ সাউথ ওয়েলস ও ভিক্টোরিয়ার ধোঁয়ায় নিউজিল্যান্ডের সাউথ আইসল্যান্ড কমলা রঙে ঢেকে গেছে। আগুনের ছাইয়ের পরিমাণ বাড়ায় হিমবাহের গলন আরও দ্রুত হবে, এমনটাই মনে করছেন সে-দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্ক। আর এতেই দুশ্চিন্তা বাড়ছে বিজ্ঞানীদের। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে আগুনের ধোঁয়ায় দক্ষিণ আল্পসের একাংশ গোলাপি রঙে ঢেকে গেছিল। কয়েক হাজার মাইল দূরের এই আগুন যে প্রতিবেশী দেশেও এমন প্রভাব ফেলবে, ভাবতে পারেননি কেউই। ২০০০ কিলোমিটার দূরের তাসমান সাগরের বনাঞ্চলে আগুন লাগায়, নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে দেখা গেছে উজ্জ্বল কমলা রঙের সূর্য, যা এ-সময়ে অস্বাভাবিক বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

এক দেশে আগুন লাগলে পাশের দেশেও তার এমন প্রভাব পড়বে, তা বোধহয় টের পায়নি কেউই। আগামী দিনে, বনাঞ্চলকে রক্ষা করতে, দাবানল আটকাতে মানুষের আরও বেশি সচেতন হওয়া জরুরি। নাহলে কোথাকার আগুন কোথায় ছড়াবে, তা কেউই জানি না। এখনই এর কোনো প্রতিরোধ গড়ে না তুললে, পৃথিবীর আয়ু যে আর বেশিদিন নেই তা বোধহয় নিশ্চিত করেই বলা যায়।

Latest News See More