চিরসবুজ ঘাসের চাদর ছেয়ে রেখেছে ছোট্ট টিলাটিকে। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে কিছু ওক গাছ। আর তার ছায়ায় হাতে ফুলের তোড়া নিয়েই বসে আছে এক যুবতী। অকালমৃত প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা করতে এসেছে সে। এমন একটা শান্ত পরিবেশেই ভেসে আসছে ভায়োলিনের হৃদয়বিদারক সুর। তার সঙ্গে চেলো, বাঁশি, পিয়ানোর তরঙ্গ মিশে এক মায়াবী পরিবেশ। দু’ফোঁটা জলও কি ঝরে পড়ল যুবতীটির চোখ থেকে? এমন এক আবেগঘন পরিস্থিতিতে মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠাই তো স্বাভাবিক!
না, কোনো সিনেমার প্রেক্ষাপটের বর্ণনা নয়। বাস্তবের কথাই হচ্ছে। সম্প্রতি, এমনই এক ছবি ধরা পড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রুকলিন প্রদেশের গ্রিন-উড সেমেটরিতে। আর এই মায়াজগত তৈরি করার নেপথ্যে রয়েছে নিউ ইয়র্কের খ্যাতনামা ‘ফিলহার্মোনিক সিম্ফনি’ অর্কেস্ট্রা। মহামারীর কারণে বিগত এক বছরেরও সঙ্গীতজগত থেকে খানিক সরে থাকার পর এভাবেই প্রত্যাবর্তন করল এই দল।
তবে এবার আর পুরনো রীতি মেনে কেবলমাত্র সাজানো স্টেজ আর টিকিট কেটে গান শুনতে আসা শ্রোতাদের সামনে তাঁরা সঙ্গীত পরিবেশন করবেন না। বরং, মহামারীর কথা মাথায় রেখেই অভিনব এক উদ্যোগ নিয়েছেন এই অর্কেস্ট্রার শিল্পীরা। সঙ্গীত পরিবেশনের স্থান হিসাবে বেছে নিয়েছেন অপ্রচলিত অঞ্চলগুলিকে। তা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সমাধিক্ষেত্র এবং চার্চ। এই জায়গাগুলিতেই প্রতি সপ্তাহান্তে ধারাবাহিকভাবে পারফর্মেন্স করবেন তাঁরা। আর তাঁরা এই সিরিজের নাম দিয়েছেন ‘ডেথ অফ ক্লাসিকাল’।
কিন্তু এমন এক উদ্যোগের কারণ কী? শিল্পীরা জানাচ্ছেন, বিগত এক বছরে কোভিডের কারণে বহু মানুষ হারিয়েছেন তাঁদের প্রিয়জনকে। ভালোভাবে শেষ বিদায় জানানোরও সুযোগটুকুও মেলেনি অনেকের। তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেই এই উদ্যোগ। পাশাপাশি দীর্ঘ সময় গৃহবন্দি থেকে ক্লান্ত তাঁরাও। অনলাইন পারফর্মেন্সের সুযোগ থাকলেও, শ্রোতাদের সামনে সঙ্গীত মঞ্চস্থ করার আবেগটাই আলাদা। তাই এহেন উদ্যোগ। তবে শুধু মৃত ব্যক্তিরাই তাঁদের শ্রোতা নন। প্রয়াত প্রিয়জনদের সঙ্গে দেখা করতে আসা, মানুষরাও এসে চুপ করে বসে থাকছেন এই অনুষ্ঠানের সামনে।
আরও পড়ুন
মঞ্চে স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে গান, ৪৬টি গুলিতে ঝাঁঝরা হলেন ভিক্টর হারা
গ্রিন-ফিল্ডের সমাধিক্ষেত্র থেকেই তাঁদের এই ধারাবাহিক সঙ্গীতানুষ্ঠানের সূচনা হল গত সপ্তাহে। আর এই সমাধিক্ষেত্রের সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে এক দীর্ঘ ইতিহাস। ১৮৩৮ প্রতিষ্ঠার সময় এই অঞ্চলটি ছিল একটা পার্ক। পরে তা বদলে যায় কবরস্থানে। এই সমাধিক্ষেত্রেই ঘুমিয়ে রয়েছেন শতাব্দীপ্রাচীন অর্কেস্ট্রাটির প্রাক্তন ডিরেক্টর লিওনার্ড বার্নস্টাইন। সেই কারণেই প্রথম প্রদর্শনীর স্থান হিসাবে তাঁরা বেছে নিয়েছেন এই অঞ্চলটিকেই।
আরও পড়ুন
মহাকাশেই নতুন গানের রিলিজ, ঐতিহাসিক নজির ‘কোল্ডপ্লে’-র
তবে কোভিড পরবর্তী সময়ে এখনও পর্যন্ত দলে যোগ দিয়ে উঠতে পারেননি সকল সঙ্গীত শিল্পীরা। কারণ, সদস্যের সংখ্যা একশোর বেশি হওয়ায় সবাই মিলে অনুশীলন করাটাই বেশ সমস্যার। বর্তমানে গুটিকয়েক শিল্পী মিলেই তাই চালিয়ে যাচ্ছেন এই প্রয়াস। দূরত্ব বজায় রেখে মাস্ক পরেই চলছে রিহার্সাল ও উপস্থাপনা। তবে ভ্যাকসিনেশন হয়ে গেলে ধীরে ধীরে যোগ দেবেন বাকিরাও, এমনটাই জানাচ্ছে সঙ্গীত দলটি…
আরও পড়ুন
গণতন্ত্রের সমর্থনে গান গেয়ে গুলিতে ঝাঁঝরা মায়ানমারের কিশোরী
Powered by Froala Editor