গঞ্জিকাসেবন ‘অপরাধ’ নয়, অর্থনীতির হাল ফেরাতে মারিজুয়ানাই হাতিয়ার নিউ ইয়র্কের

বিগত কয়েক বছর ধরেই চলছিল আলোচনা। শেষ পর্যন্ত গঞ্জিকাসেবনে ছাড়পত্র দিল নিউ ইয়র্ক প্রশাসন। সম্প্রতি প্রকাশিত হল সংশোধনী আইন। সেখানে গাঁজাকে উল্লেখ করা হয়েছে বিনোদনের মাধ্যম হিসাবে। নিউ ইয়র্কের বেশ কিছু অংশে অবিলম্বেই কার্যকরী হবে এই আইন। অন্যত্র এই নতুন আইন লাগু হতে সময় লাগবে খানিকটা।

তবে মারিজুয়ানা থেকে ‘ব্যান’ সরিয়ে নিলেও থাকছে কঠোর নিয়ন্ত্রণবিধি। স্কুল, কলেজ, কর্মক্ষেত্র কিংবা নিজের গাড়ির মধ্যেও গঞ্জিকাসেবনের অনুমতি মিলবে না নিউ ইয়র্কবাসীদের। শহরের বিশেষ কিছু জায়গায় কেবল অনুমতি দেওয়া হবে ধূমপানের। তাছাড়া নিজের বাড়িতেও এই মাদক সেবনে নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে বেঁধে দেওয়া হয়েছে পরিমাণ। কোনো ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৩ আউন্স গাঁজা কিংবা ২৪ গ্রাম চরস নিজের সঙ্গে রাখতে পারবেন। 

তবে শুধু গঞ্জিকাসেবনই নয়, বাড়িতে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য গাঁজা চাষেরও অনুমতি দিয়েছে নিউ ইয়র্ক প্রশাসন। চাইলে রোপণ করা যেতে পারে সর্বোচ্চ ৬টি গাছ। আর সেই চারা কিনতে পাওয়া যাবে শহরের বিভিন্ন নার্সারিতে। এ বিষয়ে আমস্টারডামের মডেলকেই সামনে রেখে এগিয়ে চলেছে নিউ ইয়র্ক। তবে শহরের নার্সারিগুলিতে এই পরিষেবা পেতে অপেক্ষা করতে হবে এখনও এক বছর।

প্রশ্ন থেকে যায় অন্য একটি জায়গায়। ভারত-সহ এশিয়া এবং আফ্রিকার একাধিক দেশে গঞ্জিকার নিষিদ্ধকরণের পিছনে অন্যতম প্রভাব রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। কিন্তু তারপরেও কেন নিজের দেশেই গাঁজা সেবনে আইনি ছাড় দিচ্ছে আমেরিকা? নিউ ইয়র্ক সরকারের প্রকাশিত নোটিশ পড়লেই পরিষ্কার হয়ে যাবে তার কারণ। সেখানে স্পষ্ট করেই উল্লেখ করা হয়েছে, মারিজুয়ানায় ছাড়পত্র দিলে সরকারের কোষাগারে কর হিসাবে প্রতি বছর ঢুকবে প্রায় ৩৫ কোটি মার্কিন ডলার। পাশাপাশি তৈরি হবে ৩০ থেকে ৬০ হাজার কর্মসংস্থান। কিন্তু কীভাবে? 

আরও পড়ুন
উপ-সাহারা অঞ্চলে ক্রমশ বাড়ছে মাদক-নির্ভরশীলতা, দায়ী নগরায়ন?

নতুন আইনে বলা হয়েছে গাঁজার উৎপাদক, পরিবেশক এবং খুচরো বিক্রেতাদের দেওয়া হবে সরকারি লাইসেন্স। গাঁজা ব্যবস্থাপনার জন্যও তৈরি হবে অফিস। তাছাড়াও বৃহত্তর অর্থে গাঁজার ভেষজ গুণাবলী কাজে লাগানো হবে চিকিৎসাতেও। লক্ষ্য দুঃস্থ কৃষক, সংখ্যালঘু এবং নারী মালিকানাধীন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলিকে উপার্জনের সুযোগ করে দেওয়া। গাঁজার ব্যবসা থেকে পাওয়া মোট রাজস্বের ৪০ শতাংশ শিক্ষাখাতে ব্যবহার করা হবে বলেই জানাচ্ছে নিউ ইয়র্ক প্রশাসন। পাশাপাশি ২০ শতাংশ ব্যবহৃত হবে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে। 

অন্যদিকে মারিজুয়ানা সেবন বা ব্যবসার অভিযোগে বর্তমানে মার্কিন প্রদেশে বন্দি রয়েছেন বহু মানুষ। তাঁদেরও অপরাধী হিসাবে গণ্য করা হবে না এরপর। বাতিল করা হবে অভিযোগের রেকর্ড। মুক্তি মিলবে সকলেরই। নিউ ইয়র্ক প্রশাসনের বিশ্বাস, গঞ্জিকাসেবন মাদকাসক্তির থেকে কম ক্ষতিকর সামাজের পক্ষে। তাতে অন্যান্য অপরাধ নাকি কমবে অনেকটাই। অন্তত তেমনটাই বলছে একাধিক বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষা। সব মিলিয়ে এই নতুন সংশোধনী আইন আমূল বদল আসতে চলেছে নিউ ইয়র্কে। তবে সেই পরিবর্তন কতটা লাভজনক হয় এখন সেটাই দেখার…

আরও পড়ুন
গাঁজা টানার ক্ষমতা অনুযায়ী দেওয়া হত নাম, পুরনো কলকাতার গঞ্জিকা সেবনের ইতিহাস এমনই

Powered by Froala Editor