পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের রাধানগর এলাকার ছাত্র অর্ণব মোদক। এই বছরেই মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে সে। কিন্তু এই বয়সেই তার কীর্তি রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে। বিশেষ করে এই লকডাউনের সময় ঘরে বসে বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে জুড়ে থাকার রাস্তা খুলে দিয়েছে সে। শুধুমাত্র মোবাইল ফোনে 'দৃষ্টি' নামের অ্যাপটি খুলেই সমস্ত প্রিয়জনদের সঙ্গে মুখোমুখি যোগাযোগ রাখতে পারবেন। আর এই অ্যাপটি তৈরি করেছে অর্ণব।
তবে এখন অনেকেই হয়তো ভাববেন, ভিডিও কলিং অ্যাপ তো বাজারে অনেক আছে। অর্ণবের এই আবিষ্কার সেখানে আলাদা কীসের? বিষয়টা ঠিক অতটা সরল নয়। বাজারচলতি ভিডিও কলিং অ্যাপের মাধ্যমে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কথা বলা যায়। এই সময়টা কোনো ক্ষেত্রে ৩০ মিনিট কোনো ক্ষেত্রে তার থেকে একটু বেশি। কিন্তু 'দৃষ্টি' এমন কোনো সময়ের বাধ্যবাধকতা রাখে না। যতক্ষণ খুশি কথা বলতে পারেন। তাছাড়া ১০০ জন পর্যন্ত একসঙ্গে কথা বলতে পারবেন এই অ্যাপের মাধ্যমে। আর এত সংখ্যক ব্যক্তিকে একসঙ্গে যুক্ত রাখার মতো জটিল ইন্টারফেস তৈরি করেছে একজন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী! ভাবতে অবাক লাগে বৈকি।
ইতিমধ্যে অর্ণবের তৈরি এই অ্যাপকে স্বীকৃতি দিয়েছে গুগল। প্লে স্টোর থেকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যাবে এই অ্যাপ। তাছাড়া ইন্টারন্যাশনাল এজ রেটিং কোয়ালিশন সংস্থা অর্ণবের এই অ্যাপকে ৫ এর মধ্যে ৩.৫ রেটিং দিয়েছে। অর্ণবের কথায়, অনলাইন পড়াশুনোর ক্ষেত্রে বা অফিসের কাজে বিশেষভাবে কাজে লাগতে পারে এই অ্যাপ। তবে বিজ্ঞাপনের উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই অর্ণবের কাছে। ফলে শেষ পর্যন্ত এই আবিষ্কার কতটা জনপ্রিয়তা পাবে, সেবিষয়ে সংশয় থেকেই যায়।
অর্ণবের বাবা হারাধন বাবুর কথায়, প্রথম থেকেই বেশ বুদ্ধিমান ছাত্র ছিল অর্ণব। তবে সপ্তম শ্রেণী থেকে মোবাইল এবং কম্পিউটারের প্রতি তার আকর্ষণে খানিকটা চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। যদিও পড়াশুনোর প্রতি কোনো অবহেলা করেনি সে। বরং মাধ্যমিক পরীক্ষাতেও অর্ণব বেশ ভালো ফলাফল করবে বলেই আশাবাদী তিনি। এর মধ্যেই গত দুই সপ্তাহের উপর সময় ধরে দিনে প্রায় ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা পরিশ্রম করে এই অ্যাপ তৈরি করে আত্মীয়দের কাছেও প্রশংসা পেয়েছে অর্ণব। ভবিষ্যতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশুনো করতে চায় অর্ণব। আর এই স্বপ্ন সফল করতে সবরকম সাহায্য করবেন বলেই জানিয়েছেন হারাধন বাবু।
আরও পড়ুন
বয়স মাত্র ১০, উত্তরবঙ্গের কিশোরের তৈরি একাধিক অ্যাপকে স্বীকৃতি গুগলের
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
আবিষ্কার মাত্র ৫৪ বছর আগে, অখ্যাত নার্সের তৈরি ‘ফর্মুলা’ই আজ রুখছে সংক্রমণ