সত্যজিৎ রায়ের সেপ্টোপাসের খিদে গল্পটার কথা কার না মনে নেই। মাটি কিংবা সার নয়, বরং জীবন্ত প্রাণী উদরস্থ করেই খিদে মেটাত সেই মাংসাশী উদ্ভিদ। সত্যজিতের সেই গল্প কল্পবিজ্ঞানের হলেও, তা বাস্তবের পতঙ্গভুক উদ্ভিদের উদাহরণকে সামনে রেখেই লেখা। এবার উত্তর আমেরিকায় আবিষ্কৃত হল এমনই একটি পতঙ্গভুক উদ্ভিদ। তবে পরিচিত কলসপত্রী, সূর্যশিশির ইত্যাদি ‘মাংসাশী’ উদ্ভিদদের থেকে তার চারিত্রিক গঠন সম্পূর্ণ ভিন্ন। অভিনব তার খাদ্যগ্রহণের প্রক্রিয়াও।
তবে আবিষ্কার বললে, খানিকটা ভুল বলা হবে। কারণ, ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিজ্ঞানীদের কাছে পরিচিত ‘ফলস অ্যাসফোডেল’ নামের এই উদ্ভিদ। কিন্তু সে যে আদতে মাংসাশী— তা এতদিন অজানাই ছিল গবেষকদের কাছে। আর সেটাই যে স্বাভাবিক। কারণ, আর পাঁচটা স্বাভাবিক গাছের মতোই তার গঠন। পতঙ্গভুক উদ্ভিদদের মতো এই প্রজাতিটির কোনো বিশেষ প্রকোষ্ঠ নেই শিকারকে অবদ্ধ রাখার জন্য।
বছর খানেক আগে এই বিশেষ উদ্ভিদটির সম্পর্কে পড়াশোনা করতে গিয়েই অদ্ভুত এক তথ্য পান ব্রিটিশ কলোম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক কিউয়ান্সি লিন। ফলস অ্যাসফোডেলের ফুলের মধ্যে একটি অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য লক্ষ করেন তিনি। দেখেন, বিশেষ এই প্রজাতিটির ফুলের বৃন্ত থেকে এক ধরনের আঠালো তরল নিঃসৃত হয়। যাতে আটকা পড়ে ছোটো ছোটো পতঙ্গ। কিন্তু অদ্ভুত এই বৈশিষ্ট্যের কারণ কী? সেই প্রশ্নই ভাবিয়ে তোলে গবেষক ডঃ লিনকে।
দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর রহস্যের সমাধান খুঁজে পান লিন। লক্ষ করেন, শিকারের পর সরাসরি তাদের উদরস্থ করে না এই উদ্ভিদটি। বরং, বৃন্ত থেকে নিঃসৃত উৎসেচকের মাধ্যমে দেহের বাইরেই শুরু হয় পরিপাক প্রক্রিয়া। জৈব বিয়োজনের পর শিকারের দেহ থেকে নাইট্রোজেন ও অন্যান্য খাদ্য উপাদান বৃন্তের পৃষ্ঠদেশে অবস্থিত রোমের মাধ্যমে শোষণ করে ফলস অ্যাসফোডেল।
আরও পড়ুন
শুরুতেই শনাক্ত হবে কোলন ক্যানসার, যুগান্তকারী আবিষ্কার ভারতীয় গবেষকদের
উত্তর আমেরিকাজুড়ে দেখা মেলে প্রায় শতাধিক পতঙ্গভুক উদ্ভিদের। শুষ্ক অঞ্চলের মাটিতে প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর উপাদান এবং খনিজের অভাবেই এই অভিযোজন। এতদিন পর্যন্ত সব মিলিয়ে মোট ১১ ধরনের পতঙ্গভুক উদ্ভিদের সম্পর্কে অবগত ছিলেন গবেষকরা। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হল আর একটি সম্পূর্ণ নতুন ধরনের মাংসাশী উদ্ভিদ। ফলত, এই আবিষ্কারকে যুগান্তকারী হিসাবেই দেখছে বিশ্বের উদ্ভিদবিদরা…
আরও পড়ুন
নিজে থেকেই জুড়ে যাবে ভাঙা কেলাস, বাংলার গবেষকদের আবিষ্কারে তাজ্জব বিশ্ব
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
সূর্যালোকেই বিয়োজন প্লাস্টিকের, যুগান্তকারী আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের