দিনটা ছিল ১৯৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল। অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পরীক্ষানিরীক্ষা করতে গিয়েই ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হয় সোভিয়েতের চের্নোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা জনপদে। রাতারাতি পরিত্যক্ত শহরে পরিণত হয়েছিল অঞ্চলটা। যে তেজস্ক্রিয়তা স্থায়ী থাকার কথা প্রায় ২৪ হাজার বছর। গত বছর প্রযুক্তির সাহায্যে চের্নোবিলকে (Chernobyl) বিষমুক্ত (Decontamination) করার প্রকল্প নিয়েছিলেন সুইস গবেষকরা। এবার আশানুরূপ সাফল্য মিলল তাতে।
না, কোনোরকম রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়নি চের্নোবিলে। বরং, ‘এনএসপিএস’ প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে ছিলেন বিজ্ঞানীরা। নিউক্লিয়াস সেপারেশন প্যাসিভ সিস্টেম-খ্যাত এই প্রযুক্তি সাধারণত ব্যবহার করা হয়ে থাকে পারমাণবিক বর্জ্য পরিশোধন এবং পারমাণবিক শক্তিকেন্দ্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রদান করতে। পজিট্রন কণার স্রোতের মাধ্যমে তেজস্ক্রিয় মৌলের কেন্দ্রকে পরিবর্তন আনাই এই প্রযুক্তির মূল লক্ষ্য।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই প্রযুক্তিতে বৃহত্তর ক্ষেত্রে ব্যবহার করার পরিকল্পনা নেন পোলিশ-আমেরিকান প্রযুক্তিবিদ অ্যান্ড্রু নিমসিক। যন্ত্র নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয় সুইস কোম্পানি এক্সেলটারকে। প্রাথমিকভাবে চের্নোবিলের এক্সক্লুশন জোনের অন্তর্গত ২.৫ একর জমি পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য বেছে নিয়েছিলেন তাঁরা। এক বছর পর প্রকাশিত হল সেই পরীক্ষার ফলাফল। যা রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতোই।
রিপোর্ট জানাচ্ছে, মাত্র এক বছরের মধ্যে মাটিতে তেজস্ক্রিয়তার পরিমাণ কমে এসেছে ৪৭ শতাংশ। বায়ুতে তেজস্ক্রিয় মৌলের উপস্থিতি কমেছে ৩৭ শতাংশ। আমেরিসিয়াম, স্ট্রনসিয়াম, সিজিয়ামস-সহ একাধিক তেজস্ক্রিয় মৌলের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। গবেষকদের বিশ্বাস আগামী চার বছরের মধ্যে মাটির তেজস্ক্রিয়তা প্রায় ৯৫ শতাংশ কমিয়ে আনতে পারবে এই পদ্ধতির ব্যবহার। অবশ্য তারপরেও চের্নোবিল মানুষের বসবাসযোগ্য হয়ে উঠবে কিনা, তা নিয়ে থেকেই যাচ্ছে সন্দেহ। কিন্তু এ কথা অস্বীকার করার জায়গা নেই এই পাইলট প্রোজেক্ট সফল হলে ফিলিপাইন, জাপানের ফুকুসিমার মতো অঞ্চলগুলিকেও পারমাণবিক দূষণমুক্ত করে প্রকৃতির ক্ষতস্থানে খানিকটা হলেও প্রলেপ দিতে সক্ষম হবে বিজ্ঞান…
আরও পড়ুন
চের্নোবিলে তৈরি মাদক পানীয়েও বহাল তেজস্ক্রিয়তা!
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
চের্নোবিলের তিন দশক আগেই ঘটেছিল বিশ্বের প্রথম পারমাণবিক দুর্ঘটনা