কথোপকথনে অভ্যস্ত সামুদ্রিক প্রাণীরাও! জানাচ্ছে গবেষণা

কুকুর, বেড়ালের মতো পোষ্যরা দিব্যি মানুষের কথা বোঝে, মানুষের ডাকে সাড়া দেয়। এমনকি বন্যপ্রাণীদেরও স্বতন্ত্র ভাষা রয়েছে, সে কথা প্রমাণিত হয়েছে আগেই। তবে তিমি, ডলফিনের মতো কয়েকটি ব্যতিক্রমী উদাহরণ ছাড়া, সামুদ্রিক প্রাণীরা সাধারণত শব্দ তৈরি করতে পারে না বলেই এতদিন ধরে নিতেন গবেষকরা। এবার বদল এল এই ধারণায়। স্থলজ প্রাণীদের মতোই সামুদ্রিক প্রাণীরাও (Sea Animals) যে নিজেদের মধ্যে বার্তা আদানপ্রদান (Communicate) করে, সম্প্রতি তার প্রমাণ মিলল গবেষণায়। 

সবমিলিয়ে ৫৩টি সামুদ্রিক প্রাণীর ওপর এই গবেষণা চালিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। গবেষণাটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন প্রাণীবিদ ডঃ গ্যাব্রিয়েল জর্জিউইচ কোহেন। কচ্ছপ-সহ একাধিক সামুদ্রিক প্রজাতির শব্দ রেকর্ড করতে ব্যবহৃত হয়েছিল এক বিশেষ ধরনের মাইক্রোফোন। সেখানেই ধরা পড়ে অস্বাভাবিক কম্পাঙ্কের শব্দতরঙ্গ। যা মানুষের শ্রবণযোগ্য নয়। আর সেই কারণেই এতদিন ‘নীরব’ বলেই বিজ্ঞানীরা কল্পনা করে এসেছেন এইসকল প্রাণীগুলিকে। 

গ্যাব্রিয়েল জানাচ্ছেন, বিবর্তনবাদ তত্ত্ব উপস্থাপনার ক্ষেত্রে এতটুকু ভুল ছিলেন না ডারউইন। তবে যথাযথ প্রমাণ এবং প্রযুক্তির সুযোগ না পাওয়ায়, তাঁর গবেষণায় রয়ে গিয়েছে বেশ কিছু ফাঁক। কথা বলার জন্য আমরা যে শব্দ উৎপন্ন করি, তার জন্যও দায়ী আমাদের ভোকাল কর্ড এবং ল্যারিংস। ৪০ কোটি বছর আগে ভোকাল কর্ডের ব্যবহার শেখে প্রাণীরা। অথচ, তার আগে থেকেই বিভিন্ন প্রাণী যোগাযোগ বা বার্তা প্রেরণে অভ্যস্ত বলেই দাবি তাঁর। কিন্তু ভোকাল কর্ডের ব্যবহার ছাড়াই কীভাবে শব্দ উৎপন্ন করত প্রাণীরা? 

সুইজারল্যান্ডের জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জানাচ্ছেন, এক্ষেত্রে তাদের ‘হাতিয়ার’ ছিল শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দই। নিঃশ্বাস ত্যাগের প্রকৃতির পরিবর্তন করেই নিজের ভাব প্রকাশ করত তারা। তবে ৪০ কোটি বছর আগে কিছু প্রাণী ভোকাল কর্ডের ব্যবহার শিখলেও, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এখনও বজায় রয়েছে সেই আদিম পন্থা। এই তালিকায় রয়েছে ৫০টি প্রজাতির কচ্ছপ, টুয়াটারা, লাংফিশ, সিসিলিয়ান-সহ একাধিক প্রাণী। বলাই বাহুল্য, এই তালিকা আরও দীর্ঘ হতে পারে আগামীদিনে। ইংল্যান্ডের চেস্টার চিড়িয়াখানায় বন্দি অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে সমীক্ষা চালানো হয়েছিল তাদের ওপর। ডিম ফোটা পর থেকেই তাদের গতিবিধি, অভিব্যক্তি এবং শব্দ রেকর্ড করা হয়েছিল বিভিন্ন যন্ত্রের মাধ্যমে। 

নেচার কমিউনিকেশন জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণাপত্রটি অজানা এক সামুদ্রিক জগতের ছবি তুলে ধরল তো বটেই, সেই সঙ্গে এও প্রমাণ করল, আধুনিক বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষানিরীক্ষার সাপেক্ষে খানিক বদলও প্রয়োজন ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্বের…

Powered by Froala Editor