একটা সময় বানর কিংবা শিম্পাঞ্জির মতোই চার পায়ে হেঁটে বেড়াত মানুষ। তারপর ধীরে ধীরে দাঁড়াতে শেখে সে। মানুষের এই ক্রম-অগ্রগতির মূলে রয়েছে বিবর্তনবাদ। তবে শুধুমাত্র শারীরিক পরিবর্তনই নয়, বিবর্তনে পরিবর্তিত হয় যে-কোনো প্রাণীর জিনও। ফলে, বিবর্তনকে একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া বলেই অভিহিত করেছিলেন স্বয়ং বিবর্তনবাদের জনক চার্লস ডারউইন। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এল এর সম্পূর্ণ ভিন্ন ছবি। পরীক্ষায় প্রমাণিত হল, কয়েক মাসের মধ্যেই বিবর্তিত (Evolution) হতে পারে প্রাণী।
পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানীদের গবেষণায় সম্প্রতি ধরা পড়ল এমনই অত্যাশ্চর্য ঘটনা। মূলত ফ্রুটফ্লাই (Fruit Flies) গোত্রের মাছির জিনোম নিয়ে গবেষণা করছিলেন তাঁরা। তবে জিনের জটিল শৃঙ্খলের বিশ্লেষণ সময়সাপেক্ষ তো বটেই। পাশাপাশি মাছিদের আয়ুষ্কালও বেশ কম। কাজেই গবেষণার জন্য কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে ভিন্ন ভিন্ন মাছির জিনের নমুনা সংগ্রহ করতে হয়েছিল তাঁদের। সেই জিনের বিশ্লেষণেই প্রথম বৈসাদৃশ্য ধরা পড়ে বিজ্ঞানীদের চোখে।
গবেষকরা লক্ষ্য করেন মাত্র চার মাসের মধ্যেই বদলে যায় ফ্রুটফ্লাই-এর ৬০ শতাংশ জিন। মাছিদের আয়ুষ্কাল কম হওয়ায়, এই পরিবর্তন দেখতে পাওয়া যায় দুই-তিন প্রজন্মের ব্যবধানে। পরিপার্শ্ব এবং আবহাওয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়েই এই পরিবর্তন ঘটতে থাকে অনবরত। বলতে গেলে ঋতুর সঙ্গে সঙ্গে চক্রাবর্তে বদলাতে থাকে তাদের জিনের চরিত্রও। সেদিক থেকে এই বিবর্তন ক্ষণস্থায়ীও বটে। এই পরিবর্তন এই ঘটনাটিকে ‘টেম্পোরাল রেজোলিউশন’ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা।
অবশ্য এই প্রথম নয়। গবেষণার সহ-লেখক তথা ওয়াশিংটন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক স্মিট এবং তাঁর সহকর্মীরা বেশ কয়েক বছর আগেই ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে ফ্রুটফ্লাইয়ের চারিত্রিক বৈচিত্রের বদল আসার বিষয়টি লক্ষ্য করেছিলেন। তবে তার মূলে যে বিবর্তন এবং অভিযোজনের রহস্য লুকিয়ে রয়েছে, তা তিনি নিজেও ভাবেননি কখনো। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির পরেও আজ আলোর সামনে আসেনি জীবজগতের সম্পূর্ণ রহস্য। সাম্প্রতিক আবিষ্কারে প্রকাশ্যে এল সেই রহস্যের এক খণ্ডচিত্র…
Powered by Froala Editor