মানুষ তো বটেই, জল ছাড়া পৃথিবীর যে কোনো জীবের ক্ষেত্রেই জীবনধারণ অসম্ভব। এমনকি পৃথিবীতে প্রথম প্রাণের জন্মও হয়েছিল সমুদ্রের জলেই। কিন্তু এই জলের উৎস কী? পৃথিবীর তিন-চতুর্থাংশ ভূত্বক কীভাবেই বা ভরে উঠল জলরাশিতে? কয়েক দশক ধরেই এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে চলেছেন গবেষকরা। রয়েছে একাধিক তত্ত্বও। তবে সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল শুনলে চমকে ওঠারই কথা। জলের উৎপত্তির পিছনে লুকিয়ে রয়েছে জ্বলন্ত এক অগ্নিপিণ্ড। হ্যাঁ, পৃথিবীর জলের উৎস আদতে সূর্য (Sun)!
অবাক লাগারই কথা। তবে এমনটাই জানাচ্ছে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপানের গবেষকদের যৌথ গবেষণা। আজ থেকে প্রায় বছর এগারো আগের কথা। ২০১০ সাল। জাপানের হায়াবুসা মিশনে একটি প্রাচীন গ্রহাণু থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল বেশ কিছু নমুনা। অ্যাটোমিক প্রোব টমোগ্রাফির মাধ্যমে সংগৃহীত সেই নমুনার বিশ্লেষণেই উঠে আসে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য।
জন্মলগ্নে পৃথিবী ছিল জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ড। পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে তাপ বিকিরণ করে ধূলিকণার গোলকে পরিণত হয় পৃথিবী। আর সেই ধুলো থেকেই জন্ম নেয় জল। সৌর বায়ু (Solar Wind) বা সূর্যের মহাজাগতিক বিকিরণই ধূলিকণার রাসায়নিক পরিবর্তন করে জল তৈরি করে। সেই বিকিরণ মূলত আয়নিত হাইড্রোজেন এবং হিলিয়ামের স্রোত। বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই বিশেষ প্রক্রিয়াটির নাম স্পেস ওয়েদারিং। সম্প্রতি নেচার অ্যাস্ট্রোনমি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাপত্রটি।
এতদিন পর্যন্ত ধরে নেওয়া হত, জল বহনকারী কোনো বৃহদায়তন গ্রহাণুর সঙ্গে পৃথিবীর সংঘাতে জন্ম হয়েছিল মহাসাগরের। গবেষকরা জানাচ্ছেন, সেটাও আংশিকভাবে সত্যি। অর্থাৎ, গ্রহাণুর মাধ্যমেও জলের ‘আগমন’ হয়েছিল নীলগ্রহে। তবে ভূপৃষ্ঠের ৭০ শতাংশ জলের উৎস আসলে সৌরশক্তিই। অন্যদিকে এই একই প্রক্রিয়ায় জল বা বরফের জন্ম হয় বিভিন্ন গ্রহাণু এবং ধূমকেতুতেও। এমনকি প্রাগৈতিহাসিক পৃথিবীতে এই ধরনের ধূমকেতু বা গ্রহাণুই বৃষ্টিপাতের কারণ ছিল বলেও অনুমান গবেষকরা। ছোটোবেলায় পাঠ্যপুস্তকে সকলেই আমরা বেদবাক্যের মতো পড়েছি, ‘সকল শক্তির উৎস সূর্য’। তবে ‘প্রাণশক্তি’-র পিছনেও যে সূর্যেরই সুস্পষ্ট প্রভাব রয়েছে, তা জানা ছিল না এতদিন…
আরও পড়ুন
৪৫০০ বছরের প্রাচীন সূর্যমন্দিরের সন্ধান মিশরে
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
সূর্যালোকেই বিয়োজন প্লাস্টিকের, যুগান্তকারী আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের