ছোটোবেলায় আমরা সকলেই পড়েছি পৃথিবী গোলাকার। এবং নীলগ্রন্থের মেরু অঞ্চল অনেকটা কমলালেবুর মতো চ্যাপ্টা। তবে পৃথিবীর আকার আদতে তেমনটা নয় মোটেই। ভূবিজ্ঞানের পরিভাষায় পৃথিবী গোলকের মতো মসৃণ নয়, সম্পূর্ণ উপবৃত্তাকারও নয়। এই বিশেষ আকৃতিকে ‘জিওড’ (Geode) বলেই নামাঙ্কিত করেন বিজ্ঞানীরা। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এল, এই আকৃতিও স্থায়ী নয়। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির (Gravity) জেরে প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে পৃথিবীর আকার (Shape Of Earth)।
মহাকর্ষ বলের দরুন আকৃষ্ট হয় যে-কোনো দুটি পদার্থ। নিউটন প্রবর্তিত এই অতিপরিচিত সূত্রই দায়ী পৃথিবীর আকৃতি-বদলের জন্য। কিন্তু কীভাবে? উপরিতলের থেকে পৃথিবীর কেন্দ্রের উষ্ণতা এবং চাপ কয়েকশো গুণ বেশি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সেখানে উচ্চচাপ এবং গলিত অবস্থায় রয়েছে বিভিন্ন ধাতব মৌলের আয়ন। যার ঘনত্বও পৃথিবীর উপরিতলের পদার্থের থেকে বহুগুণ বেশি। উচ্চঘনত্বের এই কেন্দ্রকই অভিকর্ষ বলের কারণে দূরত্ব কমানোর চেষ্টা করছে ভূপৃষ্ঠের। পাশাপাশি পদার্থবিদ্যার সূত্র অনুযায়ী, যে-কোনো বস্তুই ন্যূনতম স্থিতিশক্তির মাত্রায় পৌঁছাতে চায়। উপরিতল অসমপৃষ্ঠ হওয়ায়, সেই সাম্যে এখনও পৌঁছাতে পারেনি পৃথিবী। আর সেই কারণেই চলছে এই রূপবদলের প্রক্রিয়া।
তবে এখানেই শেষ নয়। সম্প্রতি ‘নেচার কমিউনিকেশন’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণাপত্রটি জানাচ্ছে, মহাকর্ষ বলের পাশাপাশি টপোগ্রাফি এবং ক্রাস্টাল মুভমেন্ট অর্থাৎ পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ স্তরের অবস্থান পরিবর্তনও দায়ী নীলগ্রহের সার্বিক আকৃতিবদলের জন্য। ফিনিক্স এবং লাস ভেগাস-সহ পশ্চিম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্বতমালার ভূতাত্ত্বিক নমুনা সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গবেষকরা। এই বিশেষ ভূ-প্রক্রিয়াকে ‘মেটামরফিক কোর কমপ্লেক্স’ নামে অভিহিত করছেন তাঁরা।
এতদিন পর্যন্ত জলবায়ু, ভূমিক্ষয় এবং টেকটোনিক পাতের অবস্থান পরিবর্তনকেই পৃথিবীর আকার-আকৃতির জন্য দায়ী করতেন বিজ্ঞানীরা। এবার সাম্প্রতিক গবেষণা নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরল গবেষকদের সামনে। পাশাপাশ এও প্রমাণ করল ৪৬০ কোটি বছর পেরিয়ে এখনও ‘কৈশোর’ পেরোয়নি পৃথিবী। তার চেহারায় ক্রমাগত পরিবর্তন হয়ে চলেছে আজও…
Powered by Froala Editor