একসময় এই ব্রহ্মাণ্ডে কোনো পদার্থই ছিল না। তারপর একটি প্রোটন এবং একটি ইলেক্ট্রন নিয়ে তৈরি হয় হাইড্রোজেন। তবে এখন শুধু পৃথিবীতেই পাওয়া যায় ৯২টি প্রাকৃতিক মৌল। পৃথিবীর বাইরে আরও ৬টি প্রাকৃতিক মৌলের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। তবে পৃথিবীতে সোনা (Gold) থেকে ইউরেনিয়াম পর্যন্ত ভারী মৌলগুলি কীভাবে এল, তা নিয়ে আজও চিন্তিত বিজ্ঞানীরা। এই ভারী ধাতুগুলির সৃষ্টির জন্য যে পরিমাণ তাপ ও চাপের প্রয়োজন, তা কোনো গ্রহেই নেই। তাহলে পৃথিবীতে কীভাবে এল এই ধাতুগুলি? সম্ভবত এবার তার উত্তর পাওয়া যেতে চলেছে। জার্মানির জিএসআই হেলমোলৎজ সেন্টার ফর হেভি আয়ন রিসার্চ সেন্টারের বিজ্ঞানীরা সোনা সহ একাধিক ভারী ধাতুর উৎপত্তির (Origin) একটি হদিশ খুঁজে পেয়েছেন।
সম্প্রতি রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির ‘মান্থলি নোটিশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে একটি গবেষণাপত্র। এই গবেষণার পিছনে রয়েছে ২০১৭ সালে নাসার লাইগো অবজারভেটরি থেকে পাওয়া কিছু তথ্য। কিছুদিন আগেই নাসার বিজ্ঞানীরা সেই বিরল ঘটনার কথা প্রকাশ করেছিলেন। লাইগো-র চোখে ধরা পড়েছিল একটি ব্ল্যাকহোল এবং একটি নিউট্রন স্টারের সংঘর্ষের ছবি। ১০০ বছর আগে আইনস্টাইনের দেওয়া মহাকর্ষীয় তরঙ্গের তত্ত্বকে প্রমাণ করে এই ঘটনা। নাসার বিজ্ঞানীরা সেই কথা আগেই জানিয়েছিলেন। তবে আরও অনেক তথ্যই জানা বাকি থেকে গিয়েছিল। তেমনই একটি বিষয় হল, এই সংঘর্ষের ফলে বিপুল পরিমাণ সোনা সৃষ্টি হয়েছিল।
এমনিতে যে-কোনো নক্ষত্রের কেন্দ্রের কাছেই সবসময় ভারী ধাতুর সৃষ্টি হয়। তবে তার পরিমাণ নেহাৎই কম। পৃথিবীতে যে বিপুল পরিমাণ সোনা, ইউরেনিয়ামের ভাণ্ডার রয়েছে – তা সূর্য থেকে এসেছে বলে মানতে নারাজ বিজ্ঞানীরা। কারণ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল তৈরির পর আর এমন ঘটনা ঘটতে পারে না। কিন্তু নিউট্রন স্টার এবং ব্ল্যাকহোলের সংঘর্ষে যে বিপুল পরিমাণ সোনা তৈরি হয়েছে, তাতে কোনো উল্কার সঙ্গে সেই সোনা পৃথিবীতে আছড়ে পড়তেই পারে। তবে ঠিক কীভাবে পুরোটা ঘটেছে, সেটা এত সহজে বলা সম্ভব নয়। তার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন। আপাতত একটি সূত্র পাওয়া গিয়েছে শুধু। সোনার ভাণ্ডারের সঙ্গে ব্ল্যাকহোলের সরাসরি সম্পর্ক – এটাও কম রোমাঞ্চকর নয়।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
ব্ল্যাকহোলের গ্রাসে নক্ষত্রও! খুলল পদার্থবিদ্যার নতুন দিগন্ত