সমুদ্রে ভেসে বেড়াচ্ছে ১৭০ ট্রিলিয়ন প্লাস্টিকের কণা, সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বিজ্ঞানীরা

হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ থেকে শুরু করে প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরতম বিন্দু মারিয়ানা ট্রেঞ্চ— বিশ্বের সর্বত্রই দাপট মাইক্রোপ্লাস্টিকের। এমনকি মানুষের ফুসফুস-হৃদপিণ্ড-রক্তেও পৌঁছে গেছে মাইক্রোপ্লাস্টিক। স্বাভাবিকভাবেই তাই প্রশ্ন উঠেছিল, সবমিলিয়ে কত পরিমাণ প্লাস্টিক কণা বর্তমানে ছড়িয়ে রয়েছে প্রকৃতিতে। সম্পূর্ণভাবে না হলেও, এবার উত্তর মিলল তার। ১৭১ ট্রিলিয়ন মাইক্রোপ্লাস্টিক (Microplastics) ভেসে বেড়াচ্ছে শুধুমাত্র বিশ্বের সাগর ও মহাসাগরগুলিতে! যার সামগ্রিক ওজন প্রায় ২৩ লক্ষ টন।

সম্প্রতি এমনই এক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে আনল ‘প্লস ওয়ান’ (PLOS ONE) জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র। নেপথ্যে গাইরেস ইনস্টিটিউটের গবেষকরা। সাম্প্রতিক এই সমীক্ষা রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে প্রকৃতিবিজ্ঞানীদের মধ্যে। কারণ, মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ সম্পর্কে এতদিন পর্যন্ত যা অনুমান করা হয়েছিল, বাস্তবে সংখ্যাটা তার প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি। কিন্তু মহাসাগরে ভেসে বেড়ানো এই বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিকের পরিসংখ্যান কীভাবে নির্ণয় করলেন গবেষকরা? 

গাইরেস ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে, প্রশান্ত-আটলান্টিক-ভারত মহাসাগর থেকে শুরু করে ভূমধ্যসাগর কিংবা বাল্টিক সাগর— বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সমুদ্র থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন গবেষকরা। সবমিলিয়ে বিবেচনা করা হয়েছিল ১২ হাজার অঞ্চলের জল। তারপর  প্রতিটি নমুনায় মিশে থাকা মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ নির্ণয় করেন গবেষকরা। তার ভিত্তিতেই তৈরি করা হয়েছিল একটি পরিসংখ্যান মডেল। এই মডেল থেকেই জানা যায়, গোটা বিশ্বের সমুদ্রে কত পরিমাণ প্লাস্টিক কণা মিশে রয়েছে। উল্লেখ্য, এই মডেলের দেওয়া ফলাফলে ৫ শতাংশ ভুল থাকলেও, বাস্তব পরিস্থিতি যথেষ্ট আশঙ্কাজনক বলেই মনে করছেন তাঁরা। 

তবে শুধু সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান নয়। ১৯৭৯ সাল থেকেই, প্রতি ৫ বছর অন্তর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সামুদ্রিক জলের নমুনা সংগ্রহ করেছিল সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি। ফলে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কী হারে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বেড়েছে সমুদ্রে— তাও উঠে আসে এই গবেষণায়। গবেষকরা জানাচ্ছেন, ২০০৫ সাল থেকে সামুদ্রিক পরিবেশে অভূতপূর্বভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বাড়ছে প্রতিবছর প্রায় ৯ শতাংশ হারে। অর্থাৎ, ২০৪০ সালের মধ্যেই সামুদ্রিক পরিবেশে প্লাস্টিক কণার পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে প্রায় ২.৬ গুণ। দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হলে, মানুষ এবং সামুদ্রিক প্রাণীদের ক্ষেত্রে টিকে থাকাই আশঙ্কাজনক হয়ে উঠবে বলেই মনে করছেন গবেষকরা। বিশেষভাবে প্লাস্টিকজাত বর্জ্যে প্রক্রিয়াকরণ ও পুনর্ব্যবহারে জোর দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। এখন দেখার আদৌ এই চ্যালেঞ্জকে কতটা সুনির্দিষ্টভাবে বাগে আনতে পারে মানব সভ্যতা…

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More