একটা সময় শিকার ছিল অভিজাতদের নেশা। আর সেই নেশার জন্যই উজাড় হয়ে গেছে ডোডো, তাসমানিয়ান বাঘ, স্টেলার সি কাউ-সহ একাধিক প্রাণী প্রজাতি। বর্তমানে সেই অর্থে শিকার বন্ধ হলেও মানুষের আগ্রাসনের সম্মুখীন বহু বহু উদ্ভিদ প্রজাতি। কাঠের জন্য চলছে আমাজন ও অন্যান্য ক্রান্তীয় অরণ্যগুলিতে নিধনযজ্ঞ। মানুষ তার প্রয়োজনে ধ্বংস করতে পারে সবকিছুই, তা একপ্রকার স্পষ্টই। আর যে সমস্ত উদ্ভিদ মানুষের প্রয়োজনে আসে না, তারা তবে তুলনামূলকভাবে সুরক্ষিত? তেমনটাই মনে হওয়া স্বাভাবিক। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা শোনাচ্ছে সম্পূর্ণ ভিন্ন তথ্য। বরং, মানুষের ‘অপ্রয়োজনীয়’ (Useless Plant Species) উদ্ভিদ প্রজাতিগুলিই সবচেয়ে বেশি অবলুপ্তির ঝুঁকির সম্মুখীন।
স্মিথসোনিয়ানের ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রির একদল গবেষকের গবেষণায় উঠে এল এমনই তথ্য। বিশ্বজুড়ে মোট ৮৬ হাজার উদ্ভিদ প্রজাতির একটি মূল্যায়ন করেছিলেন তাঁরা। যার মধ্যে সাড়ে ৬ হাজারের কিছু বেশি উদ্ভিদ প্রজাতি মানুষের প্রয়োজনে আসে। যেগুলির মধ্যে রয়েছে ভুট্টা, চাল, গমের মতো অত্যাবশ্যকীয় দানাশস্য এবং বিভিন্ন ঔষধি বৃক্ষ। এই প্রজাতিগুলিকে ‘বিজয়ী প্রজাতি’ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা। বাকি প্রায় ৮০ হাজার উদ্ভিদ প্রজাতির অধিকাংশই সরাসরি মানুষের প্রয়োজনে আসে না।
‘লুসার প্ল্যান্ট’ শ্রেণিভুক্ত এই প্রজাতিরগুলির একটি বড়ো অংশ মানুষের আগ্রাসনে। মূলত অ্যানথ্রোপোসিন-এর শুরু থেকে অর্থাৎ, গ্লোবাল ওয়ার্মিং ক্ষমতা বিস্তার করার পর থেকেই এই উদ্ভিদ প্রজাতিগুলির সংখ্যা কমছে দ্রুত হারে। যার মধ্যে ভয়াবহতার চরম সীমা অতিক্রম করে গেছে ম্যাগনোলিয়া গাছ, সাইক্যাডস, রেডউডস, জুনিপার এবং অ্যারাউকারিয়ালস-সহ প্রায় ২৬ হাজার উদ্ভিদ প্রজাতি।
গবেষকদের আশঙ্কা চলতি শতকের মধ্যেই ২০ হাজারের বেশি তালিকাভুক্ত উদ্ভিদ অবলুপ্ত হয়ে যেতে পারে পৃথিবী থেকে। এবং তাদের অবলুপ্তির প্রভাব পড়বে সমগ্র জীববৈচিত্রের ওপরেই। কিন্তু এরপরেও কি তাদের সংরক্ষণের কোনো বিশেষ বন্দোবস্ত নেওয়া হবে সরকারি বা আন্তর্জাতিক উদ্যোগে? প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে সেখানেই…
আরও পড়ুন
মানুষ ছাড়াও হাসতে অভ্যস্ত ৬৫টি প্রজাতির প্রাণী! জানাচ্ছে গবেষণা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
শুধু মানুষই নয়, অন্য প্রজাতিকে বিলুপ্তিতে ঠেলে দেয় এই 'ভারতীয়'রাও!