প্লাস্টিক দূষণই হোক কিংবা ইলেকট্রনিক বর্জ্য— পুনর্ব্যবহারই দূষণ নিয়ন্ত্রনের অন্যতম উপায়। সামগ্রিকভাবে পৃথিবীর সমস্ত বৈজ্ঞানিক এবং পরিবেশকর্মীরাই সহমত এই মন্তব্যের সঙ্গে। কিন্তু প্লাস্টিক বর্জ্য যেকোনো ক্ষেত্রেই কি পুনর্ব্যবহার করা সম্ভব? এবার এই প্রশ্নেরই উত্তর দিল সাম্প্রতিক গবেষণা। পুনর্ব্যবহৃত প্লাস্টিক বোতলে (Plastic Bottle) জল পান নতুন করে বিপদ ডেকে আনছে বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করলেন ব্রিটিশ গবেষকরা। প্লাস্টিক দূষণের থেকেও যা ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে মানুষের স্বাস্থ্যে।
লন্ডনের ব্রুনেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল জড়িত ছিলেন এই গবেষণার সঙ্গে। পুনর্ব্যবহৃত প্লাস্টিক জলের বোতল থেকে প্রায় ১৫০টি রাসায়নিক উপাদন চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা। প্লাস্টিক থেকে বন্ধনমুক্ত হয়ে জল বা অন্য কোনো পানীয়তে যা মিশে যেতে পারে অনায়াসেই। এর মধ্যে ১৮টি রাসায়নিক উপাদানের মাত্রা দূষকের ঊর্ধ্বসীমা থেকেও বেশ খানিকটা বেশি।
প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহারের সময় মূলত ব্যবহৃত হয় পলিইথিলিন টেরেফথালেট বা পিইটি। এই পিইটি-র উপস্থিতিই প্লাস্টিক বোতলে রাখা পানীয়ের রাসায়নিক ঘনত্বকে বাড়িয়ে দেয়। শুধু পানীয়ের ক্ষেত্রেই নয়, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং প্যাকেজিং-এও তৃতীয় সর্বাধিক ব্যবহৃত প্লাস্টিক পিইটি। যার মধ্যে রয়েছে বিসফেনলের মতো পদার্থ। যা অন্তঃস্রাব, প্রজন ব্যাধি, কার্ডিও-ভাসকুলার সমস্যা, ক্যানসার-সহ একাধিক জটিল রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
অন্যদিকে ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ পিইটি বোতলের পুনর্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। ফলে, আরও পুনর্ব্যবহৃত প্লাস্টিকের কারণে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা ক্রমশ বেড়ে চলেছে।
সম্প্রতি, এই ব্রিটিশ গবেষণাকে স্বীকৃতি জানিয়েছে ব্রুনেলের সেন্টার ফর পলিউশন রিসার্চ অ্যান্ড পলিসিও। প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহারে কাজে লাগা রাসায়নিক অনুঘটকগুলির প্রক্রিয়াকরণের দিকে বিশেষ লক্ষ রাখা হবে বলেই জানাচ্ছে সংস্থাটি। তবে গবেষকদের মতে, পানীয় জলের বোতলের ক্ষেত্রে পুনর্ব্যবহৃত প্লাস্টিকের ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ সমাধান। বরং, পিইটি জাতীয় প্লাস্টিক অন্যান্য ব্যবহারিক সামগ্রীতে কাজে লাগানো যেতে পারে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন তো বটেই, এখন দেখার অন্যান্য বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলি প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারের সম্পর্কে শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয়…
Powered by Froala Editor