বাদামি বর্ণের পালকে ঢাকা শরীর। ধূসর ডানা। দেখতে অনেকটা আমাদের অতিপরিচিত ঘুঘু বা পায়রার মতোই। তবে ঠোঁট পায়রার সচেয়ে বেশ খানিকটা লম্বা। বার-টেইলড গডউইট। আমেরিকার আলাস্কায় দেখে মেলে এই বিশেষ প্রজাতির পরিযায়ী পাখিটির। প্রতিবছর আগস্ট-সেপ্টেম্বর নাগাদ প্রজননের জন্য এই পাখি পাড়ি দেয় দক্ষিণ গোলার্ধে। মূলত অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডই তাদের গন্তব্য। এবার এই পরিযায়ী পাখি প্রজাতিটির সম্পর্কে প্রকাশ্যে এল আশ্চর্যকর তথ্য! বিশ্রাম, খাওয়া-দাওয়া কিংবা জল পান করা ছাড়াই গড়ে ৭০০০ মাইল পথ অতিক্রম করে এই পাখি!
হ্যাঁ, ঠিকই দেখেছেন সাত হাজার মাইল। অর্থাৎ, প্রায় ১১ হাজার কিলোমিটার। নেদারল্যান্ডসের গ্রোনিংজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা পরিযায়ী পাখিদের চরিত্র এবং তাদের জীবনযাপনের রহস্যোন্মোচনের জন্য বছর কয়েক আগে শুরু করেছিলেন একটি বিশেষ প্রকল্প। ‘গ্লোবাল ফ্লাইওয়ে’-খ্যাত সেই প্রোজেক্টে একাধিক পরিযায়ী পাখির দেহে যুক্ত করা হয়েছিল মাইক্রোচিপ। যার মধ্যে দিয়ে শুধু পাখিদের অবস্থানই নয়, তাদের গতিবিধি, ডানার কম্পাঙ্ক— সবকিছু তথ্যই হাতে পৌঁছায় গবেষকদের।
সম্প্রতি সেই তথ্য বিশ্লেষণ করেই রীতিমতো চমকে উঠেছেন গবেষকরা। একটানা প্রায় ২৩৭ ঘণ্টা উড়ান দিয়ে আমেরিকার উত্তরপ্রান্ত থেকে অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছায় গডউইটরা। এর আগে এক-উড়ানে সবচেয়ে বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে দেখা গিয়েছিল একটি মঙ্গোলিয়ান কোকিলকে। একবারে ১৩টি দেশ পেরিয়ে সে উড়েছিল ৭৫০০ মাইল। তবে সেটা ছিল বিচ্ছিন্ন ঘটনা। অর্থাৎ, সমস্ত মঙ্গোলিয়ান কোকিলই যে এক উড়ানেই পরিযায়ন করে তেমন নয়। তবে নিরবচ্ছিন্ন উড়ান গডউইডদের একরকম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই বটে। পাশাপাশি ৮০৮০ মাইল অতিক্রম করে নতুন রেকর্ডও গড়েছে এই বিশেষ পরিযায়ী পাখিটি।
প্রশ্ন থেকে যায়, একটানা এতক্ষণ কীভাবে ওড়ে এই পাখি? গবেষকরা জানাচ্ছেন, গডউইটদের দেহের গঠন বিস্ময়কর। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত দেহের আকার বদলাতে সক্ষম এই প্রজাতি। পরিযায়নের আগে প্রচুর পরিমাণ পোকা-মাকড়, কেঁচো ও অন্যান্য প্রাণীর দেহাবশেষ খায় গডউইটরা। তাতে দেহের মধ্যে সঞ্চিত হয় ব্যাপক পরিমাণ ফ্যাট। একটানা উড়ানের সময় এই ফ্যাটই শক্তির জোগান দেয় তাদের। পাশাপাশি পরিযায়নের আগে তাদের পেশিতেও বদল লক্ষ করেছেন গবেষকরা।
আরও পড়ুন
উটপাখির আয়তনের প্রায় দেড়গুণ, কীভাবে হারিয়ে গেল বিশ্বের বৃহত্তম দৌড়বাজ পাখি?
তবে দীর্ঘ-উড়ানে সক্ষম হলেও, গডউইটদের সামনে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে মানব সভ্যতা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর দিয়ে ওড়ার সময়, রাতের বেলায় কৃত্রিম আলোর দ্বারা আকৃষ্ট হয় এই পাখি। ফলে, দুর্ঘটনায় মৃত্যুর তালিকাতেও উপরের দিকে রয়েছে এই প্রজাতিটি। তাই পরিযায়নের এই সময়টায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডার মতো দেশগুলিতে যাতে বিশেষভাবে নজর দেওয়া হয় আলোকদূষণের দিকে, সেই আর্জিই জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা…
আরও পড়ুন
ইতিহাস বা রূপকথায় নয়, এবার বাস্তবেই দেখা মিলবে ডোডো পাখির
Powered by Froala Editor