বহুদিন পর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় কিংবা প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা হলে আবেগতাড়িত হয়ে পড়ি আমরা সকলেই। কখনও আবার চিকচিক করে ওঠে চোখের কোল। অবশ্য এই কান্না দুঃখের নয়, তা আনন্দাশ্রু (Tears Of Joy)। তবে শুধু মানুষই নয়, এই একই ঘটনা ঘটে কুকুরের সঙ্গেও। বহুদিন বিচ্ছিন্ন থাকার পর, মালিকের দেখা পেলে আনন্দে কেঁদে ফেলে সারমেয় (Dogs)। হ্যাঁ, এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল সাম্প্রতিক গবেষণায়।
এই গবেষণার সূত্রপাত হয়েছিল বছর ছয়েক আগে। জাপানি গবেষক ও আজাবু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাকেফুমি কিকুসুই এক অদ্ভুত ঘটনার সাক্ষী হয়েছিলেন নিজের বাড়িতেই। তাঁর ৬ বছর বয়সি পুডলস প্রজাতির কুকুরটি তখন সদ্য জন্ম দিয়েছে তিনটি শাবকের। কিকুসুই লক্ষ করেন, সন্তানদের দুধ খাওয়ানোর সময় চোখ ছলছল করতে তাঁর পোষ্যের। একদিন-দুদিন নয়, কিকুসুই-এর চোখে পড়ে শাবকদের খাওয়ানোর সময় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে তাঁর কুকুর। এখানেই শেষ নয়, সন্তানদের তার থেকে সরিয়ে নিয়ে গেলে কিংবা দীর্ঘ সময় পর কিকুসুই বাড়িতে ফিরলেও পুনরাবৃত্তি হয় এই একই ঘটনার। যা বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল তাঁর। সেখান থেকেই গবেষণার সূত্রপাত।
কিকুসুই ও তাঁর সহকর্মীদের দাবি, কুকুরের এই কান্না আসলে ‘বন্ডিং হরমোন’ অক্সিটোসিনের পরিমাণের সঙ্গে যুক্ত। আশ্চর্যের বিষয় হল, পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নির্গত হলেও এই হরমোন মস্তিষ্কে প্রবেশ করতে পারে না তাঁর বৃহৎ আণবিক আকারের জন্য। বদলে, দেহের বিভিন্ন অংশে নানান প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। তার মধ্যে অন্যতম হল চোখের জল। অবশ্য অক্সিটোসিন-এর প্রভাবে মূলত আনন্দাশ্রুই তৈরি হয়ে থাকে। তাছাড়াও গর্ভবতী মহিলার শরীরেও তৈরি হয় অক্সিটোসিন। ফলে, গর্ভবতী অবস্থায় এমনকি সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরেও আবেগপ্রবণ থাকতে দেখা যায় মহিলাদের।
জাপানের গবেষকদের মতে, হুবহু মানুষের মতোই ঘটনা ঘটে কুকুরের ক্ষেত্রেও। গবেষণার প্রথম পর্যায়ে ১৮টি কুকুরের কান্নার পরিমাণ পরিমাপ করেছিলেন গবেষকরা। পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে তাদের বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছিল মালিকের সঙ্গে। তারপর তাদের সুযোগ দেওয়া হয় পুনর্মিলনের। তার ঠিক পাঁচ মিনিটের মধ্যেই দেখা যায়, উল্লেখযোগ্যভাবে তাদের শরীরে বৃদ্ধি পেয়েছে অক্সিটোসিনের পরিমাণ। আনন্দাশ্রু ছাড়াও, তাদের চারিত্রিক ব্যবহারেও স্পষ্ট ফুটে উঠেছিল পুনর্মিলনের আবেগ।
পরবর্তী পর্যায়ে, দুই ধাপে আরও ২২টি ও ৭৪টি কুকুরের ওপর পরীক্ষা চালানো হয়। কাগজের স্ট্রিপে করা সংগ্রহও করা হয়েছিল তাদের চোখের জল। সেই জলের বিশ্লেষণই প্রমাণ করে আনন্দাশ্রু দেখা যায় কুকুরের মধ্যেও। একই ঘটনা প্রমাণিত হয় গর্ভবতী কুকুরের ক্ষেত্রেও। তবে এখানেই শেষ নয়, মানুষের সঙ্গে থাকতে থাকতে পোষ্য কুকুরের চরিত্র ধীরে ধীরে বিবর্তিত হয়েছে বলেও দাবি করছেন গবেষকরা। সাধারণত, মানুষের মতো ভ্রূ থাকে না কুকুরের। তবে মানুষের দেখাদেখি, আবেগপ্রকাশের সময় অনেক ক্ষেত্রেই চোখের উপরিভাগ কুঞ্চিত করে পোষ্য কুকুর। ‘সিউডো-আইব্রো’ বলেই গবেষকরা উল্লেখ করছেন এই বিষয়টিকে।
সম্প্রতি কারেন্ট বায়োলজি বিজ্ঞান পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সংশ্লিষ্ট গবেষণাপত্রটি। উল্লেখ্য, মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণীর চোখ থেকেও যে আনন্দাশ্রু নির্গত হয়— তা বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রমাণিত হল এই প্রথম…
Powered by Froala Editor