আজ থেকে প্রায় ৭০০ বছর আগের কথা। চতুর্দশ শতকের মাঝামাঝি সময় সেটা। ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছিল এক অদ্ভুত রোগ। ধুম জ্বর, সঙ্গে ফুলে যেত লিম্ফ নোড। কালো হয়ে যেত হাত-পা। মাত্র ২-৩ দিনের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ত মানুষ। বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ এই মহামারী আজ পরিচিত ‘ব্ল্যাক ডেথ’ (Black Death) নামে। যা মূলত বিশেষ ধরনের প্লেগ (Plague)। সে-সময় যে মাড়ক অর্ধেক খালি করে দিয়েছিল ইউরোপ, সেই রোগের ক্ষতচিহ্ন আজও বয়ে চলেছে মানুষ। সম্প্রতি এমনই আশ্চর্য এক তথ্য উঠে এল গবেষণায়।
ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা যৌথভাবে পরিচালনা করেছিলেন এই গবেষণাটির। লন্ডনের ইস্ট স্মিথফিল্ড সমাধিক্ষেত্র থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল সে-সময়ের কয়েক প্রজন্মের মানুষের দেহাবশেষ। সবমিলিয়ে ২০৬টি প্রাচীন কঙ্কালের দাঁতের নমুনার ডিএনএ বিশ্লেষণ করে পৃথক করা হয়েছিল ব্ল্যাক ডেথ রোগ প্রতিরোধকারী জিনকে। অন্যদিকে পরবর্তী পর্যায়ের গবেষণার জন্যও ইতিমধ্যেই ডেনমার্ক ও সুইজারল্যান্ড থেকেও নমুনা সংগ্রহের কাজে নেমছেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষকরা জানাচ্ছেন, ব্ল্যাক ডেথের পরবর্তী সময়ে মাত্র ২ প্রজন্মের মধ্যেই প্রায় ১০ শতাংশ মিউটেশন ঘটেছে মানব জিনের। অর্থাৎ, রোগের প্রকোপ ঠেকাতে স্বাভাবিকভাবেই বিবর্তিত গিয়েছিল মানুষের জিন। পরবর্তী ৬০০ বছরে মানুষের মধ্যে আরও বেড়েছে আরও ব্ল্যাক ডেথ-কে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা।
এই বিশেষ ক্ষমতার জন্যও গবেষকরা দায়ী করেছেন ‘ইআরএপি-২’ নামের একটি বিশেষ জিনের মিউটেশনকে। যার উপস্থিতি এক ধাক্কায় ৪০ শতাংশ কমিয়ে দেয় ব্ল্যাক ডেথে মৃত্যুর সম্ভাবনাকে। আসলে প্লেগের জীবাণুকে প্রতিরোধ করার জন্য আগে থেকেই একটি বিশেষ প্রোটিন তৈরি করে রাখে এই জিন। শরীরে প্লেগের জীবাণু প্রবেশ করলেই অ্যান্টিবডি হিসাবে সক্রিয় হয়ে ওঠে সেগুলি।
তবে আপাতদৃষ্টিতে মানুষের এই মিউটেশন লাভজনক মনে হলেও, আদতে তেমনটা নয়। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষণাপত্রের লেখক ডঃ লুইস বারেইরো জানাচ্ছেন, এই ধরনের প্রোটিন ক্রমশ প্রভাবিত করে চলেছে মানুষের দেহকে। অন্ত্র কিংবা পাকস্থলির প্রদাহের সঙ্গে এই অটো-ইমিউনিটির ঘনিষ্ঠ যোগ রয়েছে বলেই দাবি তাঁর। আশ্চর্যের বিষয় হল, তা থেকে মুক্তি পাওয়ারও কোনো উপায় নেই।
প্রশ্ন থেকে যায়, প্লেগের মতো কোভিড মহামারীর ক্ষেত্রেও কি তবে ঘটতে চলেছে একই ঘটনা? না, তেমনটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কারণ, কোভিডে মূলত প্রাণ হারিয়েছেন বা বেশি পরিমাণে আক্রান্ত হয়েছেন প্রবীণরা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সন্তান ধারণের বয়স পেরিয়ে যাওয়ায়, তাঁদের জিনের মিউটেশন পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য। এমনটাই জানাচ্ছে, নেচার জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণাপত্র…
Powered by Froala Editor