শুধু সমুদ্রই নয়, মাইক্রোপ্লাস্টিকে ছেয়েছে মাটিও

কোভিড পরিস্থিতিতে প্লাস্টিক দূষণের দৌরাত্ম্য বেড়েছে গোটা বিশ্বজুড়ে। ফেস মাস্ক, গ্লাভস কিংবা পিপিই কিটের মতো একক ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্যে ছেয়ে গেছে পৃথিবী। তবে এই ধরনের বর্জ্যের থেকেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের দূষণ বিশেষ করে চিন্তা বাড়াচ্ছে গবেষকদের। এতদিন পর্যন্ত সমুদ্র, জলাশয় এবং বায়ুতেই মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যেত। এবার সাম্প্রতিক গবেষণা জানাল, মৃত্তিকা দূষণেরও (Soil Pollution) কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মাইক্রোপ্লাস্টিক (Microplastic)। 

মূলত, ১ থেকে ৫০০০ মাইক্রোমিটার দৈর্ঘ্যের কঠিন প্লাস্টিক বা সিন্থেটিক ফাইবারের কণাকে মাইক্রোপ্লাস্টিক শ্রেণির আওতায় ফেলেন গবেষকরা। আকারে ছোটো ও ভরেও কম হওয়ার কারণে খুব সহজেই জল কিংবা বায়ুতে পরিবাহিত হতে পারে এই ধরনের প্লাস্টিকের কণা। এমনকি বায়ুবাহিত হতে হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্টেও পৌঁছেছে মাইক্রোপ্লাস্টিক। কিন্তু মাটিতে সার্বিকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে এই দূষক— সে ব্যাপারে স্পষ্ট প্রমাণ ছিল না এতদিন। সম্প্রতি জার্মানির হার্ভে নর্মাডি এবং থুনেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা প্রমাণ করলেন তেমনটাই। 

কিন্তু গ্যাস কিংবা জলের মতো বাহক না হওয়া সত্ত্বেও কীভাবে মাটিতে মিশছে এই ভয়াবহ দূষক? বলতে গেলে জলের মাধ্যমেই ‘সংক্রমিত’ হচ্ছে মাটি। জার্মানিতে করা সমীক্ষায় উঠে আসছে মূলত সেচের জলের মধ্যে দিয়েই মাটিতে মিশছে মাইক্রোপ্লাস্টিক। তবে এই দূষকের কণার আয়তন ক্ষুদ্রতর হওয়ায় শুধু ভূত্বক নয়, মাটির কণার মধ্যে দিয়ে তা পৌঁছে যাচ্ছে আরও গভীরে। পাশাপাশি কৃষিক্ষেত্রে প্লাস্টিক ফিল্ম এবং প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিতে প্লাস্টিকের ব্যবহারের মাধ্যমেও বাড়ছে মাইক্রোপ্লাস্টিকের দূষণ। 

এর আগে যেমন একাধিক সামুদ্রিক প্রাণীর দেহে মাইক্রোপ্লাস্টিকের সন্ধান মিলেছিলেন, এবার কেঁচো, পিঁপড়ে-সহ বিভিন্ন স্থলচর প্রাণীর দেহেও মিলল মাইক্রোপ্লাস্টিকের নমুনা। ফলে প্লাস্টিকজাত এই মৃত্তিকাদূষণ যে স্থলজ বাস্তুতন্ত্রকে বিষিয়ে তুলছে, তা বলার অপেক্ষা থাকে না। পাশাপাশি মাটির গঠনকেও ভেঙে ফেলছে মাইক্রোপ্লাস্টিকের বাড়বাড়ন্ত। 

আরও পড়ুন
প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার করে তৈরি জুতো, দিশা দেখাচ্ছে ভারতীয় স্টার্ট আপ

তবে সবথেকে আশঙ্কার বিষয় হল, মাটি থেকে মাইক্রোপ্লাস্টিককে আলাদা করা তো দূরের কথা, মাটিতে আদৌ মাইক্রোপ্লাস্টিক মিশেছে কিনা তা বোঝাও বেশ মুশকিলের কাজ। মাটির আণবিক ও রাসায়নিক গঠনের সঙ্গে মাইক্রোপ্লাস্টিকের বিস্তর মিল থাকায় নমুনার বিশ্লেষণ করা শুধু কষ্টসাধ্যই নয়, খরচ সাপেক্ষও বটে। আর সেই কারণে কোন কোন অঞ্চল মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণের শিকার, তা নির্ণয় করাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে গবেষকদের কাছে। এই সমস্যার স্থায়ী প্রতিকার ঠিক কী— এখনও পর্যন্ত সেই নির্দিষ্ট পথের সন্ধান দিতে ব্যর্থ বিজ্ঞান… 

আরও পড়ুন
প্লাস্টিক দূষণ রোধ থেকে বৃক্ষরোপণ— হাজির রোবট

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
কোভিডের কারণে লাফিয়ে বেড়েছে প্লাস্টিক দূষণ, শঙ্কিত বিজ্ঞানীরা

More From Author See More