প্লাস্টিক দূষণ রোধ থেকে বৃক্ষরোপণ— হাজির রোবট

সাম্প্রতিক সময়ে গোটা বিশ্বজুড়েই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু জলবায়ু পরিবর্তন। কপ-২৬ নিয়েও রীতিমতো সরগরম মিডিয়া। পরিবেশ রক্ষায় ব্রতী না হলে মানব সভ্যতার নিস্তার নেই— তা বোঝা যাচ্ছে ভালোই। কিন্তু এই আলোচনা সংশ্লিষ্ট দেশের প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা আদৌ কি ভাঙতে পারবে? এই নিষ্ক্রিয়তার পিছনে যেমন রাষ্ট্রপ্রধানদের স্বার্থ লুকিয়ে রয়েছে, তেমনই দূষণ নিয়ন্ত্রণের (Pollution Control) প্রক্রিয়াও বেশ খরচসাপেক্ষ এবং মানুষের জন্য শ্রমসাধ্যও বটে। এবার এই সমস্যারই অভিনব সমাধান দিলেন দুবাইয়ের গবেষকরা। মানুষ নয়, এবার পরিবেশ-প্রকৃতির রক্ষা করবে স্বল্প ব্যয়ে তৈরি রোবট (Robot)।

সম্প্রতি দুবাইয়ে আয়োজিত বার্ষিক গ্লোবাল গ্র্যাড শো-তে উঠে এল দূষণের এমনই অত্যাধুনিক সমাধান। দুবাই ইনস্টিটিউট অফ ডিজাইন অ্যান্ড ইনোভেশনের শিক্ষার্থী মাজয়ার এতেহাজি উপস্থাপন করলেন সৌরচালিত রোবট ‘এ-সিডবট’। থ্রি-ডি প্রিন্টের মাধ্যমে তৈরি মাত্র ২০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের এই রোবট একবার চার্জ দিলেই চলবে সারাদিন। পাঁচ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের অঞ্চলজুড়ে নিজেই রোপণ করবে গাছের বীজ। 

জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে ক্রমশ খরার প্রকোপ বাড়ছে গোটা বিশ্বজুড়েই। বাড়ছে মরুভূমির প্রকৃতিও। আর সেই বৃদ্ধি আটকাতেই আগামীদিনে পরিবেশবিদদের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠবে এই স্বয়ংক্রিয় রোবট। মূলত, মরুভূমিতে বৃক্ষরোপণের জন্যই বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে এই রোবটকে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, গাছের দানা যদি রোপণ করা হলেও মরুভূমিতে সেগুলি জল পাবে কীভাবে? জল ছাড়া যে অঙ্কুরোদ্গমই সম্ভব নয়। 

সেই ব্যবস্থাও করে রেখেছেন প্রযুক্তিবিদ এতেহাজি। রোবটের মধ্যেই রয়েছে বিশেষ স্ক্যানার। যা ভূত্বক পরীক্ষা করে জানিয়ে দেবে কোথাও আদ্রতা সামান্য হলেও বেশি, কোথায় মাটির নিচে জল সঞ্চিত রয়েছে অল্প হলেও। এই স্ক্যানারের মাধ্যমে ক্রমশ ভূত্বক পরীক্ষা করেই বীজ রোপণ করবে ‘এ-সিডবট’। মানুষের কাজ শুধুমাত্র সময় করে তার ‘পেটে’ বীজ ভরে দেওয়া।

মিডল ইস্ট টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির আরেক শিক্ষার্থী দারিয়া এরসিভান উপস্থান করেছেন আরও একটি অভিনব রোবট। যা জল থেকে পৃথক করতে সক্ষম মাইক্রোপ্লাস্টিককে। ওয়াশিং মেশিন, বাড়ির জল-নিকাশি ব্যবস্থা কিংবা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে এই যন্ত্রাংশটি লাগে জল থেকে অনায়াসেই তা ফিল্টার করে নেবে মাইক্রোপ্লাস্টিককে। শুধু তাই নয়, একই প্রযুক্তিতে তৈরি স্বয়ংক্রিয় চলমাত্র রোবট ব্যবহার করা যেতে পারে নদী ও সমুদ্র থেকে মাইক্রোপ্লাস্টিক ছেঁচে বার করে আনার কাজে। 

মধ্য এশিয়ার তরুণ উদ্ভাবকদের এই আবিষ্কারই ভরসা জাগাচ্ছে আগামীদিনের দূষণমুক্ত পৃথিবীর। পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানে তরুণ প্রজন্মের এই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণেও যথেষ্ট আশাবাদী গবেষকরা। এখন দেখার, অতিসাধারণ ও কম বাজেটের সমাধানকে রাষ্ট্রীয় শক্তিরা ব্যবহারিক কাজের জন্য বেছে নেন কিনা…

Powered by Froala Editor