বিশ্বজুড়ে ক্রমেই বেড়ে চলেছে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ। মারিয়ানা ট্রেঞ্চ থেকে উচ্চতম শৃঙ্গ এভারেস্ট— সর্বত্রই পৌঁছে গেছে মাইক্রোপ্লাস্টিক। অস্তিত্ব মিলেছে মানুষের রক্তেও। অথচ, পুনর্ব্যবহার ছাড়া প্লাস্টিক বর্জ্যকে মুছে ফেলার উপায় নেই কোনো। তার দহনেও যে উৎপন্ন হয় বিষাক্ত নানাধরনের গ্যাস। এবার এই সমস্যারই অভিনব সমাধান খুঁজে বার করলেন বিজ্ঞানীরা। আবিষ্কার করে ফেললেন এমন এক আশ্চর্য উৎসেচক, যা অনায়াসেই ভেঙে ফেলে প্লাস্টিকের দীর্ঘ শৃঙ্খল। প্লাস্টিককে পরিণত করে জৈববিয়োজ্য পদার্থে।
২০১৬ সাল। সর্বপ্রথম জাপানের গবেষকরা আবিষ্কার করেছিলেন একটি বিশেষ ব্যাকটেরিয়া। যা থেকে নিঃসৃত উৎসেচক ভেঙে ফেলে প্লাস্টিক অণু। তবে এই উৎসেচকের পরিমাণ এতটাই কম হয় যে তাকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব নয়। তবে হাল ছাড়েননি গবেষকরা কৃত্রিমভাবে এই উৎসেচক তৈরির জন্য কোমর বেঁধে তাঁরা নেমে পড়েছিলেন মাঠে। আর ম্যাজিক খেলে গেল তাতেই।
সম্প্রতি পোর্টমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা কৃত্রিমভাবে ল্যাবরেটরিতে তৈরি করলেন এই উৎসেচক। শুধু উৎসেচক তৈরিই নয়, বায়োইঞ্জিনিয়ারিং-এর মাধ্যমে এই উৎসেচকের গঠনে বেশ কিছু পরিবর্তন এনে তাকে আরও কার্যকরি করে তুললেন গবেষকরা। ‘নিউ অ্যাটলাস’ পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত উৎসেচকের থেকে ৬ গুণ দ্রুত প্লাস্টিক অণুকে ভেঙে ফেলতে পারে কৃত্রিম জৈব পদার্থটি। পাশাপাশি তা প্লাস্টিককে পরিণত করে বায়োডিগ্রেডেবল বিল্ডিং ব্লকে। অর্থাৎ, সহজ ভাষায় বলতে গেলে, প্লাস্টিক অণুকে ভাঙলেও তাতে তৈরি হয় না মাইক্রোপ্লাস্টিক।
‘এমএইচই-টেস’ খ্যাত এই সুপার এনজাইমই এখন আশা দেখাচ্ছে প্লাস্টিক বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার। তবে এই বিশেষ উৎসেচকের ব্যবহার শুরু করার জন্য এখনও অপেক্ষা করতে হবে বেশ কিছু বছর। কারণ, এই উৎসেচক কার্যকরী হলেও, তার উৎপাদন পদ্ধতি যথেষ্ট ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ। এই রাসায়নিক ধাঁধাঁর সমাধান করতেই নতুন করে কোমর বেঁধেছেন বিজ্ঞানীরা…
Powered by Froala Editor