“পণ্যের যেভাবে দাম বেড়ে চলেছে, সেখানে দাঁড়িয়ে মিষ্টি কেনার সামর্থ্য থাকে না অনেকেরই। তাবলে কি তাঁরা আমাদের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির স্বাদ থেকে বঞ্চিত হবেন? তাঁদের কথা ভেবেই আজও আমরা মিষ্টির দাম রেখেছি ২-৩ টাকা।”
বলছিলেন কিংবদন্তি মিষ্টান্ন প্রতিষ্ঠান ‘মাখনলাল দাস অ্যান্ড সনস’-এর (Makhanlal Das & Sons) কর্ণধার স্বপন দাস। হ্যাঁ, আজও চিৎপুর রোডের এই দোকানে সন্দেশ পাওয়া যায় মাত্র ২ টাকায়। চিৎপুরের এই ঐতিহ্যবাহী দোকান তো রয়েছেই, সঙ্গে এবার নতুন রূপে গিরিশ পার্কেও খুলছে মাখনলালের নতুন শাখা। আগামীকাল থেকেই মিষ্টিপ্রেমীদের জন্য খুলে যাবে এই দোকানের দরজা। অবশ্য এই দোকানকে ‘মাখনলাল অ্যান্ড সনস’-এর শাখা বললে হয়তো খানিকটা ভুলই হবে। ‘মাখনলাল অ্যান্ড বেলস’-খ্যাত (Makhanlal & Belles) এই নতুন দোকানের নেপথ্যে রয়েছেন স্বপনবাবুর কন্যা রিমিতা দাস (Rimita Das)। বাঙালিকে ফিউশন মিষ্টির স্বাদ দিতেই তাঁর এই উদ্যোগ।
“ঐতিহ্যবাহী সন্দেশের জন্যই বিখ্যাত মাখনলাল। তাই সন্দেশ দিয়েই এই নতুন দোকানের যাত্রা শুরু হবে। তবে পরবর্তীতে আমার ইচ্ছে বেকারিতে যাওয়ার। ইচ্ছে আছে ফিউশন মিষ্টির জগতেও এই ব্র্যান্ডটাকে পরিচিত করে তোলা”, জানালেন রিমিতা।
কথার সূত্রেই উঠে এল মাখনলালের ইতিহাসের কথাও। ঐতিহ্যবাহী এই দোকানের শিকড় ছড়িয়ে রয়েছে উনিশ শতাব্দীতে। আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর আগের কথা। বর্ধমানের দুবরাজহাট গ্রাম থেকে পায়ে হেঁটে কলকাতায় এসেছিলেন ময়রা রামচন্দ্র দাস। পাথুরিয়াঘাটার হাটে মিষ্টি বিক্রি করতেন তিনি। পরবর্তীকালে তাঁর পৌত্র মাখনলাল দাসের হাত ধরেই রাম-ময়রার এই দোকান বিখ্যাত হয়ে ওঠে ‘মাখনলাল দাস অ্যান্ড সনস’ নামে। মণ্ডার বদলে সন্দেশ তৈরিতে বিশেষ করে জোর দেন তিনি। বর্তমানে এই দোকানের ভার তাঁর প্রপৌত্র স্বপনবাবুর হাতে। জলভরা, মনোহরা, তালশাঁস কিংবা দেলখোস— নরম ও কড়া পাকের সন্দেশের জগতে আজও অদ্বিতীয় শতাব্দীপ্রাচীন এই দোকান।
আশ্চর্যের বিষয় হল, চিৎপুরের এই দোকানে গেলেই বোঝা যাবে আজও সেখানে সময় থমকে রয়েছে উনিশ শতকেই। আর পাঁচটা দোকানের মতো চাকচিক্যে বিশ্বাসী নন স্বপনবাবু। তাঁর কথায়, “গ্রাম বাংলার হাটের সংস্কৃতিতেই আজও আমরা মিষ্টি বিক্রি করি। এটাই আমাদের ঐতিহ্য।” এই দোকানে যে কোনো পরিবর্তন আসছে না তা স্পষ্ট করেই জানিয়ে রাখলেন তিনি। তবে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই সেজে উঠবে গিরিশ পার্কের নতুন দোকানটি। “স্বাস্থ্যের কারণে বর্তমানে ক্রমশ মিষ্টির থেকে দূরত্ব বাড়ছে মানুষের। সেইদিকটা মাথায় রেখে চিনির জায়গায় জাগারি কিংবা গুড় ব্যবহার করার চেষ্টা করছি আমরা। তাতে স্বাদ এবং স্বাস্থ্য দুটোই বজায় থাকবে সমানভাবে। তাছাড়াও মিষ্টিপ্রেমীদের বহু নতুন, লোভনীয় জিনিস নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে”, জানালেন মাখনলালের বংশধর তথা তরুণ উদ্যোগপতি রিমিতা।
এর আগে চিৎপুর ছাড়াও মানিকতলা এবং বিধাননগরে কাউন্টার ছিল মাখনলালের। এবার গিরিশ পার্কের বুকে খুলতে চলেছে চতুর্থ আউটলেট। কী ভাবছেন উৎসবের এই আবহে একবার ঘুরে আসবেন নাকি এই দোকানে?
Powered by Froala Editor