কিছুদিন আগের কথা। করোনা মহামারীর মধ্যেই নতুন করে ত্রাস সঞ্চার করেছিল আরও এক প্রাণঘাতী রোগ। মিউকরমাইকোসিস। যার জন্য দায়ী ছিল ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। বাংলায় এই ঘাতক ছত্রাকের প্রভাব না দেখা গেলেও, রাজস্থান ও মহারাষ্ট্রে অতিমারী হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল এই মারণ রোগটিকে। তবে কেবলমাত্র ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের জন্যই নয়, মিউকরমাইকোসিসের কারণ হিসাবে উঠে আসে একাধিক ছত্রাকের নাম। সেই তালিকাতেই সম্প্রতি যুক্ত হল আরও একটি নাম। কানিংহামেল্লা অরুণালোকি। নামের মধ্যে বাঙালিত্বের প্রভাব যে স্পষ্ট, তা আর নতুন করে বলার নেই। হ্যাঁ, এই নতুন আবিষ্কৃত ছত্রাকটির নামকরণ করা হয়েছে এক বঙ্গসন্তানের নামানুসারে।
ডঃ অরুণালোক চক্রবর্তী। প্রবীণ এই চিকিৎসক এবং চণ্ডীগড় পিজিআই-এর মাইক্রোবায়োলজি অধ্যাপক ভারতের ছত্রাক-গবেষণার পথিকৃৎ। এর আগেও একাধিক উল্লেখযোগ্য গবেষণায় পথ দেখিয়েছিলেন তিনি। ছত্রাক-বিজ্ঞানে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ক্যানডিডা ম্যান পরিচয়ও পেয়ছিলেন কিংবদন্তি বাঙালি গবেষক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ছত্রাকবাহী রোগ প্রতিরোধের বিশেষজ্ঞ কমিটিরও অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ছত্রাক গবেষণায় তাঁর এই অবদানের জন্য, তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়েই নতুন ছত্রাকটির নামকরণ করা হয় তাঁর ‘অরুণালোকি’।
বেশ কিছুদিন আগে ভুবনেশ্বরের এইমসে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন ওড়িশার এক যুবক। সাইনাস এবং ত্বকে অভিনব এক সংক্রমণ দেখা গিয়েছিল তাঁর। প্রাথমিকভাবে ফাঙ্গাল ইনফেকশন বলে চিহ্নিত করা হলেও, অন্যান্য ছত্রাকদের সঙ্গে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অমিল থাকায় খানিক ধন্দে ছিল গবেষকরা। তবে পরবর্তীতে বিস্তারিত গবেষণা ও পরীক্ষায় ধরা পড়ে, সংশ্লিষ্ট ছত্রাকটি একেবারে নতুন প্রজাতি।
সবমিলিয়ে কানিংহামেল্লা গোত্রের মোট ১৫টি ছত্রাক প্রজাতির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় প্রকৃতিতে। তার মধ্যে মাত্র ৩টি প্রজাতি মানুষের দেহে সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম। এবার সেই তালিকাতেই যুক্ত হল আরও একটি নতুন ঘাতক।
আরও পড়ুন
মশা মারতে ছত্রাক দাগা! অভিনব আবিষ্কার বাঙালি গবেষকের
মূলত, শারীরিক অসুস্থতা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার দুর্বলতার সুযোগ নিয়েই মানবদেহে বাসা বাঁধে কানিংহামেল্লা ছত্রাক। ঠিক যেভাবে কোভিড-পরবর্তী সময়ে ঘাতক হয়ে উঠেছিল ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। কিন্তু সদ্য আবিষ্কৃত ছত্রাকটির বিশেষত্ব হল, স্বাভাবিক সুস্থ মানুষের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও অনায়াসেই হার মানাতে পারে এ ছত্রাকটি। তবে ব্যাপক মাত্রায় সংক্রমণের আগেই এই নতুন ছত্রাকের চিহ্নিতকরণ সম্ভব হওয়ায় অনেকটাই কমে যাচ্ছে আশঙ্কার মাত্রা। ইতিমধ্যেই নতুন এই ছত্রাকের প্রতিকার নিয়েও শুরু হয়েছে গবেষণা। এক দিক থেকে বলতে গেলে, ছত্রাক গবেষণা এবং অতিমারীর একটি সম্ভাবনাকেই যেন সমূলে উৎপাটিত করল সাম্প্রতিক এই আবিষ্কার। যা নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী…
আরও পড়ুন
ভাইরাসের পর এবার সংক্রমণ ঘাতক ছত্রাকের, সিঁদুরে মেঘ দেখছেন চিকিৎসকরা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
অন্ধকার আলো যোগাচ্ছে ছত্রাক! অত্যাশ্চর্য আবিষ্কার জয়ন্তীয় পাহাড়ের কোলে