সিংহের শরীর, মানুষের মাথা। সেইসঙ্গে পিঠে রয়েছে ঈগলের মতো প্রশস্ত ডানা। স্ফিংস। আজ থেকে হাজার হাজার বছর আগে গ্রিক পুরাণে লিপিবদ্ধ হয়েছিল এই আশ্চর্য চরিত্রটির কথা। তবে মজার বিষয় হল, স্ফিংসের (Sphinx) কথা উঠলেই, গ্রিসের বদলে মানুষের চোখের সামনে ভেসে ওঠে মিশরের ছবি। গিজার গ্রেট পিরামিডের কাছেই অবস্থিত প্রাকাণ্ড স্ফিংস মূর্তিই হয়ে উঠেছে সে-দেশের অন্যতম প্রতীক। এবার বালির দেশ থেকেই উদ্ধার হল আরও একটি স্ফিংস মূর্তি।
নীল নদের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত দক্ষিণ মিশরীয় (Egypt) শহর কেনাতে সম্প্রতি প্রত্নতাত্ত্বিকরা খুঁজে পেলেন চুনাপাথরের তৈরি এই বিশেষ স্ফিংস মূর্তিটি। ছোট্ট একটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের সঙ্গেই পাওয়া যাও সেটিকে। সঙ্গে পাওয়া যায় আরও বেশ কিছু মাটির তৈরি সরঞ্জাম, ইটের বেসিন, মই, পাত্র এবং মূর্তি। উল্লেখ্য, এই আবিষ্কারের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন মিশরের প্রাক্তন মন্ত্রী ও শামস বিশ্ববিদ্যালয়ের মিশরবিদ্যার অধ্যাপক মাহমুদ এলদামাতি।
তবে গিজায় অবস্থিত খাফ্রের পিরামিডের ঠিক পাশেই যে স্ফিংসের দেখা মেলে, তার থেকে এই মূর্তিটি অনেকটাই আলাদা। প্রথমত, গিজার স্ফিংসের উচ্চতা ২০ ফুট। সেখানে সদ্য-আবিষ্কৃত এই স্ফিংসটির উচ্চতা মাত্র এক ফুটের কাছাকাছি। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে বালিঝড়ে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে গিজার স্ফিংস। ফলে, তার মুখাবয়ব স্পষ্টভাবে বোঝা যায় না আর। সেখানে কেনাতের স্ফিংসটির মুখাবয়ব যথেষ্ট পরিষ্কার। গবেষকদের ধারণা, সেখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে রোমান সম্রাট ক্লডিয়াসের হাস্যোজ্জ্বল মুখ। প্রথম শতকের ৪১-৫৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত যাঁর শাসন বহাল ছিল রোমে। কাজেই এই স্ফিংসটি যে কোনো ফ্যারাও তৈরি করেননি, বরং তার নেপথ্যে ছিলেন রোমানরা, তা এককথায় স্পষ্ট।
তবে শুধু স্ফিংসই নয়। মূর্তিটির সঙ্গেই পাওয়া গেছে চুনাপাথরের নির্মিত একটি শিলালিপিও। মূলত হায়ারোগ্লিফিক, তাছাড়া রোমান ডেমোটিক লিপিতে সেখানে লিপিবদ্ধ রয়েছে বেশ কিছু তথ্য। এখনও পর্যন্ত যার পাঠোদ্ধার করতে পারেননি গবেষকরা। বিশেষ এই শিলালিপিটিকে পাঠানো হয়েছে পরীক্ষার জন্য। অনুমান, এই বার্তা পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হল, প্রকাশ্যে আসতে পারে বাইজেন্টাইন যুগের অজানা কোনো রহস্য। সে-যুগে মিশর এবং রোমের মধ্যে কীধরনের সম্পর্ক ছিল— তার হদিশ পাওয়া যেতা পারে বলেই আশাবাদী গবেষকরা। সবমিলিয়ে এই নতুন আবিষ্কার নিয়েই উত্তেজনায় ফুটছেন মিশরপ্রেমীরা…
Powered by Froala Editor