কয়েকদিন আগের কথা। সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে উঠে এসেছিল বতসোয়ানার নাম। কারণ, সেখানে থেকেই খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম হিরে। তবে এই ঘটনা নতুন কিছু না। বতসোয়ানার হীরক-খনি থেকে এর আগেও সন্ধান মিলেছিল বড়ো আকৃতির হিরের। এবার তেমনই একটি হিরের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও শুদ্ধতা করতে গিয়েই গবেষকরা খুঁজে পেলেন সম্পূর্ণ নতুন একটি খনিজ (New Mineral)। পৃথিবীর বুকে যার অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয় বলেই এতদিন মনে করে এসেছেন গবেষকরা।
ক্যালসিয়াম সিলিকেট পেরোভস্কাইট। সম্প্রতি হিরের স্বচ্ছতা ও শুদ্ধতা পরীক্ষা করতে গিয়ে এই যৌগ তথা খনিজটির সন্ধান পেলেন কার্নেগি ইনস্টিটিউশন ফর সায়েন্সের (Carnegie Institution For Science) গবেষকরা। সাম্প্রতিক এই আবিষ্কারের সঙ্গেই খুলে গেল ভূতত্ত্বের একাধিক রহস্যের দরজাও। সংশ্লিষ্ট গবেষণাপত্রটি সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে বিশ্বের প্রথম সারির বিজ্ঞান পত্রিকা ‘সায়েন্স জার্নাল’-এ।
তবে এই বিশেষ যৌগটি অজানা ছিল গবেষকদের কাছে। ১৯৭৫ সালের কথা। ল্যাবরেটরিতে কৃত্রিমভাবে সিলিকনের এই যৌগটি প্রথম তৈরি করা হয়। তার জন্য উচ্চ তাপমাত্রা তো বটেই, প্রয়োজন হয়েছিল প্রায় ২ লক্ষ গুণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপ। যা প্রাকৃতিকভাবে তৈরি করা অসম্ভব বলাই চলে। ফলে, গবেষকরা ধরে নিয়েছিলেন পৃথিবীতে খনিজ হিসাবে এই যৌগটির কোনো অস্তিত্ব নেই। এবার ভাঙল সেই ধারণাই।
প্রাথমিকভাবে হিরের শুদ্ধতা পরীক্ষা করার সময়, লেজার রশ্মিতে ধরা পড়ে, অশুদ্ধি মিশে রয়েছে সংশ্লিষ্ট হিরের খণ্ডটির মধ্যে। তারপরই হিরের মধ্যে থেকে ড্রিল করে বার করে আনা হয় ‘অশুদ্ধ’ খনিজের অংশটিকে। সেটি যে সিলিকনের কোনো যৌগ, তা বোঝা গিয়েছিল আগেই। তবে আণবিক বিশ্লেষণ করতেই চমকে ওঠেন গবেষকরা। সেটি আর অন্যকিছু নয় ক্যালসিয়াম সিলিকেট পেরোভস্কাইট। কিন্তু প্রকৃতিতে কীভাবে তৈরি হল এই যৌগ?
আরও পড়ুন
অন্য পরিচয়ের আড়াল সরিয়ে, ২২০ বছর পর ‘আবিষ্কৃত’ নতুন খনিজ!
গবেষণায় জানা যায়, খনিজটির জন্ম অন্ততপক্ষে ভূপৃষ্ঠের ৬৬০ থেকে ৯০০ কিলোমিটার গভীরে। পৃথিবীর ম্যান্টেল বা বহির্স্তরের চাপ ছাড়াও টেকটোনিক প্লেটের চাপের কারণেই তৈরি হয়েছে এই খনিজটি। আর সেই চাপ এবং প্লেটের গতিশীলতার কারণেই তা আবদ্ধ হয়েছিল কার্বন শৃঙ্খলের মধ্যে। বাইরের সেই কার্বনের আবরণই পরবর্তীতে রূপান্তরিত হয় হিরেতে। হিরে প্রকৃতিতে প্রাপ্ত কঠিনতম পদার্থ হওয়ায়, খনিজটি অপরিবর্তিত অবস্থাতেই রয়ে গেছে তার মধ্যে আবদ্ধ হয়ে।
আরও পড়ুন
নতুন খনিজের সন্ধান দিলেন রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা, যৌগ হয়েও কাজ করতে পারে পরিবাহী হিসাবে
বিখ্যাত ভূতাত্ত্বিক হো-কোয়াং ‘ডেভ’ মাও-এর নামানুসারে খনিজটির নামকরণ করা হয়েছে ‘ডেভমাওইট’। এতদিন পর্যন্ত কেবলমাত্র ভূত্বকের চাপকেই শুধুমাত্র খনিজ তৈরির কারণ হিসাবে ধরে নেওয়া হত। এবার সেই ধারণাও বদলে দিল সাম্প্রতিক আবিষ্কার। সব মিলিয়ে বলতে গেলে ভূতত্ত্বের নতুন দিগন্তের সন্ধান দিল খনিজটি।
আরও পড়ুন
চন্দ্রপৃষ্ঠে রয়েছে বিপুল পরিমাণ খনিজ, জন্মের ইতিহাস নিয়েও নতুন ভাবনাচিন্তা শুরু
Powered by Froala Editor