‘সার্ভাইভাল অফ দ্য ফিটেস্ট’। এই কথাটার ওপরেই নির্ভর করে দাঁড়িয়ে রয়েছে জীবজগৎ। প্রকৃতির থেকে কিংবা অন্যান্য প্রাণীদের থেকে বাঁচতে গেলে রপ্ত করতে হবে কৌশল। আর সেই জন্যই প্রত্যেক প্রাণীরাই অভিযোজনের মাধ্যমে আয়ত্ত করেছে বিশেষ দৈহিক গঠন। অনেকেই প্রাণী শিকারিদের থেকে বাঁচতে রপ্ত করেছে কেমোফ্ল্যাজ হওয়ার ক্ষমতা। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেলেন প্রাণীদের আত্মরক্ষার এবং ছদ্মবেশ ধারণের এক অদ্ভুত কৌশল।
তবে অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে এই কেমোফ্ল্যাজ হয় ভিন্ন রকমের। স্থলচর অনেক প্রাণী যেমন গিরগিটি, বা ব্যাঙ নিজের গায়ের রং বদলে ফেলে পরিবেশের সঙ্গে। অনেক ছোট মাছের দেহ-ও হয় স্বচ্ছ, বর্ণহীন। কিন্তু গভীর সমুদ্রের মাছেরা? ৬৫০ ফুট গভীরতা অবধি আলো পৌঁছায় সমুদ্রে। তারপর ঘন অন্ধকার। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২ মাইল গভীরে থাকা এই মাছগুলির গায়ের রং তাই উজ্জ্বল বর্ণের হয় না। হয় পুরোপুরি মিশকালো। যা তাদের দেহের ওপর পতিত আলোর প্রায় সবটুকুই শোষণ করে নেয়।
সম্প্রতি স্মিথসোনিয়ান ন্যাশনাল মিউজিয়ামের এক গবেষক ক্যারেন ওসবর্ন একটি গবেষণায় জানালেন এমনটাই। মেক্সিকো উপসাগরে সন্ধান পেলেন গভীর সমুদ্রের মাছের প্রায় ১৮টি প্রজাতির। যাদের দেহ থেকে মাত্র ০.৫ শতাংশ আলো প্রতিফলিত হয়। তাদের ত্বকের আচরণ আদর্শ কৃষ্ণবস্তুর মতই। ওসবর্ন জানান, পর্যাপ্ত আলোতেও এদের ছবি তুললে তা আবছা ছায়ামূর্তির মত দেখতে লাগে। আল্ট্রা-ব্ল্যাক এই প্রজাতিগুলির মধ্যে কিছু প্রাণীরর রয়েছে জৈব-বিকিরণ ক্ষমতাও। তা শিকারকে আকৃষ্ট করার জন্য ব্যবহৃত করে এরা।
গবেষণা করতে গিয়ে ওসবর্ন জানাচ্ছেন, ত্বকের সাধারণ রঞ্জক পদার্থ মেলানিন এদের ত্বকে থাকে না। সেখানে উপস্থিত থাকে মেলানোজোম। যার ঘন-সন্নিবিষ্ট স্তর এবং বিশেষ আকার আলোকে প্রবেশ করতে দিলেও তাকে বেরোতে দেয় না। আবদ্ধ করে নিজের মধ্যে। ফলে প্রাণীগুলি পুরোপুরিই অদৃশ্য থাকতে পারে অন্ধকারে। প্রকৃত কৃষ্ণবস্তুর আচরণের এই প্রক্রিয়া কৃত্রিমভাবে তৈরি করা গেলে পরবর্তীকালে অপটিকাল ফাইবার বা তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রভূত সাহায্য করবে বলেই জানাচ্ছেন তিনি। সেই বিষয়েই নতুন উদ্যমে শুরু হতে চলেছে গবেষণা...
আরও পড়ুন
দূষণে বিপর্যস্ত গভীরতম সমুদ্রের মাছেরাও, শরীরে মিলল পারদের নমুনা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
দেখতে পায় না চোখে, বসবাস গুহার গভীরে – ‘আশ্চর্য’ মাছের হদিশ ভারতে