কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি তৈরি হয়েছে নতুন একটি স্কুল। আর সেই স্কুলের নাম, ‘স্কুল অফ ইন্টারডিসিপ্লিনারি স্টাডিজ’। এখানে বিজ্ঞানের কোনো সীমা নেই যেন। অনায়াসে একটা থেকে টপকে আরেকটা বিষয়ে ঢুকে পড়া যায়। “গতবছর আমাদের উপাচার্য অধ্যাপক শঙ্কর ঘোষের পরিকল্পনায় পথচলা শুরু আমাদের এই স্কুলের।” বললেন আরেক অধ্যাপক ডঃ শর্বদেব কুণ্ডু। ভারতবর্ষে এমন উদ্যোগ এই প্রথম। এখানে একই ছাতার তলায় পড়ানো হয় জিনোম সায়েন্স, ডেটা সায়েন্স এবং ন্যানো সায়েন্স অ্যান্ড ন্যানোটেকনোলজি। “আসলে তিনটি কোর্সের জন্য আলাদা আলাদা শংসাপত্র দেওয়া হলেও আমাদের পড়াশোনা হয় প্রায় একসঙ্গেই। আর তিনটি কোর্সেরও প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ একই। সেজন্যই এই স্কুলের নাম ইন্টারডিসিপ্লিনারি স্টাডিজ।” বলছিলেন শর্বদেব কুণ্ডু।
“ইন্টারডিসিপ্লিনারি, এই ব্যাপারটা কিন্তু বিজ্ঞানের জগতে বরাবরই চালু ছিল। আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর কথাই ভাবুন না। পদার্থবিজ্ঞানে বেতার তরঙ্গ নিয়েও কাজ করছেন, গাছের প্রাণের স্পন্দনও খুঁজে বের করছেন আবার কারিগরি বিষয়েও কাজ করছিলেন।” বলছিলেন অধ্যাপক ডঃ বিধান হাজরা।
কিন্তু কেন এমন উদ্যোগ? বিজ্ঞানশিক্ষার জগতের একটু হাল-হদিশ রাখলেই সেটা বুঝতে খুব অসুবিধা হবে না। ন্যানোসায়েন্স অ্যান্ড ন্যানোটেকনোলজি বিভাগের ছাত্র অরিন্দিম দোলই বলছেন, “পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখব আধুনিক গবেষণা এমনই নানা খাতে বয়ে চলেছে। তার মধ্যে অনেক কিছু আবিষ্কারের রহস্য আছে। কিন্তু আমাদের দেশে এখনও বিভিন্ন বিষয়ের খোপে বিজ্ঞানকে ভেঙে ভেঙে পড়ানো হয়।” অরিন্দমের কথায়, “ইউজিসি-র উচিৎ ছিল সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এমন একটা কোর্সের গাইডলাইন তৈরি করা। অন্তত কল্যাণী ইউনিভার্সিটিকে দেশে যদি তারা এমন সিদ্ধান্ত নেন, তাহলেও সেটা খুশির খবর।
ডঃ বিধান হাজরা বলছিলেন, “উচ্চমাধ্যমিকের পরেই ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিং কিছু একটা পড়তে হবে, এই মানসিকতাটাই একটা বড়ো বাধা। আর তার জন্য প্রয়োজন ছোট থেকে নানা বিষয়ে উৎসাহ দেওয়া। বিজ্ঞানকে ভালোবাসলেই চেনা যাবে তার মধ্যে কত রহস্য লুকিয়ে আছে। সেইসব রহস্যের সমাধান তো করতে হবে। আবার তার প্রয়োগের জন্য প্রযুক্তিবিদেরও প্রয়োজন আছে। তবে তত্ত্ব এবং প্রয়োগ এই দুটো বিষয় একসঙ্গে শেখা গেলে তবেই নতুন নতুন গবেষণার প্রসার সম্ভব।” আপাতত প্রথম বছর পেরিয়ে দ্বিতীয় বছরে পা দিতে চলেছে কল্যাণী ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ ইন্টারডিসিপ্লিনারি স্টাডিজ। ক্রমশ ভারতের বিজ্ঞান গবেষণায় এই প্রতিষ্ঠান যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, সে-বিষয়ে আশাবাদী সকলেই।
Powered by Froala Editor