দার্জিলিং-এর পাদদেশে শিলিগুড়ি শহর বরাবরই উত্তরবঙ্গের গর্ব। আর এবার সেই শহরের নামে পরিচিতি পেতে চলেছে একটি ফুলের গাছ। সারা বিশ্বের সামনে উত্তরবঙ্গের এই শহরের নাম হাজির করতে চলেছে সদ্য আবিষ্কার হওয়া ফুল টোরেনিয়া শিলিগুড়িয়েন্সিস। সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক ও এক গবেষক এই গাছ আবিষ্কার করেছেন। আর প্রাথমিক শনাক্তকরণের পর নতুন প্রজাতি হিসাবে তার নাম নথিভুক্তও হয়েছে। গাছটির বিষয়ে গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে ফিনল্যান্ডের জার্নাল আনালস অফ বোটানিসি ফেনিসি পত্রিকায়।
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডঃ মনোরঞ্জন চৌধুরী এবং গবেষক আরাত্রিক পাল ক্যাম্পাস চত্বরেই খুঁজে পেয়েছিলেন এই ফুলের গাছ। পরীক্ষাগারে নিয়ে এসে শনাক্তকরণের পর দেখা যায় তা বিজ্ঞানীদের জানা প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ উদ্ভিদপ্রজাতির কোনোটির সঙ্গেই মেলে না। আরও বিশদে পরীক্ষা করার জন্য দেশবিদেশের অন্যান্য পরীক্ষাগারেও নমুনা পাঠানো হয়। সেইসঙ্গে শহরের আশেপাশে নানা অঞ্চল থেকে খুঁজে বের করা হয় আরও কয়েকটি সমপ্রজাতির গাছকে। অধ্যাপক মনোরঞ্জন চৌধুরী জানিয়েছেন লিন্ডারনিয়াসি গোত্রের এই গাছটি মূলত স্যাঁতস্যাঁতে এলাকায় জন্মায়। তবে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে ঠিক কত উচ্চতা পর্যন্ত তার বাসস্থান, তা এখনও জানা যায়নি।
ব্রিটিশ শাসনের শুরুর দিকে হিমালয় ও তার পাদদেশ অঞ্চলে বহু নতুন প্রজাতির গাছ শনাক্ত করেছিলেন সিবি ক্লার্ক, জেডি হুকারের মতো বিশ্বখ্যাত উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা। তবে এগুলির বিজ্ঞানসম্মত নামের সঙ্গে সবসময়ই ‘বেঙ্গল’ বা ‘হিমালয়া’ শব্দটি জুড়ে দেওয়া হয়েছে। কোনো বিশেষ অঞ্চল বা শহরের নাম দেওয়া হয়নি। এই প্রথম কোনো নতুন প্রজাতির গাছের নামের সঙ্গে জড়িয়ে গেল উত্তরবঙ্গের একটি শহরের নাম। এই আবিষ্কার সমগ্র উত্তরবঙ্গের জন্যই তাই খুশির খবর বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। পাশাপাশি টোরেনিয়া শিলিগুড়িয়েন্সিস সংক্রান্ত গবেষণার কাজও অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে। তার বাসস্থান চিহ্নিত করার পাশাপাশি এর কোনো ঔষধি গুণ আছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অন্যান্য টোরেনিয়া প্রজাতির থেকে এর বৈশিষ্ট্য কতটা আলাদা, তাও জানা যাবে কিছুদিনের মধ্যেই। তবে শিলিগুড়ি শহরের এই স্বীকৃতি যে উদ্ভিদ গবেষণার জগতে এক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা, সে-কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
Powered by Froala Editor