উজ্জ্বল বেগুনি রং-এর শরীর। মাথার অংশটির রং সূর্যের মতো হলুদ। পাখনাতেও রঙের বাহার দেখার মতো। ঠিক যেন রামধনুর ছাপ দিয়ে গেছে কেউ এই মাছের দেহে। বছর তিনেক আগে তাঞ্জানিয়ার জাঞ্জিবার অঞ্চলের মেসোফোটিক রিফে প্রথম সন্ধান মিলেছিল এই বিশেষ মাছ-এর। মার্ভেলের কমিক চরিত্র ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’-এর নামানুসারে এই বিশেষ মাছের নাম রাখা হয়েছিল ‘ভাইব্রেনিয়াম ফেয়ারি রাসে’। এখন এই গোত্রের নতুন প্রজাতির মাছের হদিশ মিলল মালদ্বীপে (Maldives)।
মালদ্বীপের জাতীয় ফুল ‘ফিনিফেনমা’। নাম শুনে আশ্চর্য কোনো ফুল মনে হওয়াই স্বাভাবিক। তবে স্থানীয় ধিভেহি ভাষায় ‘ফিনিফেনমা’-র অর্থ হল গোলাপি গোলাপ বা পিঙ্ক রোস। আর এই ফুলের নামানুসারেই সদ্য-আবিষ্কৃত মৎস্যপ্রজাতিটির নামকরণ করা হয়েছে ‘রোস-ভেইল্ড ফেয়ারি রাসে’ (Rose-veiled Fairy Wrasse)। নাম থেকেই আন্দাজ করা সম্ভব এই বিশেষ মাছের রং বেগুনির পরিবর্তে উজ্জ্বল গোলাপি। এই আবিষ্কারের নেপথ্যে রয়েছেন মালদ্বীপ মেরিন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষক ডঃ আহমেদ নাজিব। উল্লেখ্য, এই মাছটিই মালদ্বীপের গবেষকদের আবিষ্কৃত সর্বপ্রথম কোনো স্থানীয় প্রজাতি।
তবে সৌন্দর্যের জন্য নয়, বরং আশ্চর্য শারীরিক বৈশিষ্ট্যের জন্যই বর্তমানে প্রাণীবিজ্ঞানীদের চর্চার অন্যতম বিষয় হয়ে উঠেছে ‘ফেয়ারি রাসে’। ব্যাপারটা কেমন? গবেষকরা জানাচ্ছেন, মহিলা হয়ে জন্মালেও নির্দিষ্ট বয়স পরে, পুরুষে পরিণত হয় ‘ফেয়ারি রাসে’। শারীরিক গঠন এবং হরমোনাল পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই পাল্টায় এদের রং-ও। তবে এই আশ্চর্য পরিবর্তনের জন্য কী কী উৎসেচক দায়ী, সে-ব্যাপারে এখনও নিশ্চিতভাবে কোনো তথ্য দিতে পারেনি গবেষকরা।
প্রশ্ন থেকে যায় এমন আশ্চর্য প্রজাতির উপস্থিতি কেন মানুষের চোখের আড়ালে ছিল এতদিন? গবেষকরা জানাচ্ছেন, সাধারণত, ৭০ থেকে ১৫০ মিটার গভীরতার বসবাস করে এই প্রজাতির মাছ। অর্থাৎ, এই মাছকে গভীর সমুদ্রের মাছ বলা যায় না। আবার সচরাচর সমুদ্রের উপরিতলেও নাগাল পাওয়া যায় না তাদের। এবং এই বিশেষ গভীরতায় সাবমেরিনের সাহায্যে পরিদর্শন করা যেমন সম্ভব নয়, তেমনই এই অঞ্চলে পৌঁছাতে পারেন না স্কুবা ডাইভাররাও। ফলে, জনবসতির কাছাকাছি থেকেও অজানা থেকে গিয়েছিল এই প্রজাতি। এই বিশেষ মাছের রহস্য উন্মোচন করতে ভবিষ্যতে আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে বলেই জানাচ্ছেন গবেষকরা…
Powered by Froala Editor