বিবর্তনের পথ আর রহস্যময় প্রাণীজগতের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়েছে বিজ্ঞান। তবে পরিপার্শ্বকে সম্পূর্ণভাবে এখনও কি চিনে উঠতে পেরেছি আমরা? বোধ হয় না। আর সেই কারণেই নিত্যদিন আমাদের সামনে আসে নতুন প্রজাতির অস্তিত্ব। এবার এমনই একটি বিস্ময়কর প্রজাতির আবিষ্কার হল খোদ পশ্চিমবঙ্গে। উত্তরবঙ্গের নেওড়াভ্যালি জাতীয় উদ্যানে খুঁজে পাওয়া গেল নতুন এক ফড়িং-এর প্রজাতি।
তবে এই আবিষ্কার সাম্প্রতিক বললে ভুল হবে খানিকটা। প্রথম এই প্রজাতি চোখে পড়েছিল ২০১৮ সালে। সৌজন্যে, হাওড়ার শ্যামপুর সিদ্ধেশ্বরী কলেজের প্রাণীবিদ্যার অধ্যাপক প্রসেনজিৎ দাঁ। বছর তিনেক আগে কালিম্পং-এ একটি রাজ্য বনদপ্তরের ক্যাম্প চলাকালীন তাঁর ক্যামেরায় ধরা পড়ে এই ফড়িং-এর প্রজাতিটি। কালো শরীরের ওপর উজ্জ্বল সবুজ বর্ণের নকশা তাদের দেহে।
প্রাথমিকভাবে সম্পূর্ণ নতুন প্রজাতি বলে মনে হলেও নিশ্চিত ছিলেন না তিনি।
পরে এই বিষয়টির ওপর বিস্তারিত গবেষণা ও তথ্য সংগ্রহ করেন হাওড়ার সাঁতরাগাছির অধ্যাপক। স্পষ্ট হয়ে যায়, ভুল ছিলেন না তিনি। ফড়িং-এর এই প্রজাতির কথা উল্লেখিত হয়নি কোনো বৈজ্ঞানিক নথিতেই। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেল তাঁর এই গবেষণা। গত মাসের ২৫ তারিখে গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয় জুটাক্সা পত্রিকায়।
তবে এই প্রথম নয়। এর আগেও এমন নতুন এক ফড়িং প্রজাতির সনাক্তকরণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি। সেটা ২০১৫ সাল। তিন বছর ধরে তাঁর সংগ্রহ করা তথ্য ও ছবির ওপর ভিত্তি করেই আবিষ্কৃত হয়েছিল আরও একটি ফড়িং প্রজাতি। কেরালা এবং গোয়ায় মিলেছিল ‘ইয়েলো স্ট্রিপড ড্রাগনফ্লাই’।
আরও পড়ুন
বিলুপ্তির পথে বিরল প্রজাতির ওরাংওটাং, দায়ী মানবসভ্যতাই
সদ্য আবিষ্কৃত ফড়িংটির নামকরণ করা হয়েছে পরিবেশবিদ ও শিক্ষক শুভঙ্কর পাত্রের নামে। প্রজাতিটির বিজ্ঞানসম্মত নাম সেফালাএসনা পাত্রই। জানা যাচ্ছে, কালিম্পং-সহ হিমালয়ের বিভিন্ন অংশেই দেখতে পাওয়া যায় এই ফড়িংকে। তবে এই প্রজাতি অত্যন্ত দুর্লভ। মূলত পার্বত্য খরস্রোতা নদী ও জলাশয়ই তাদের প্রজননস্থল। ক্রমাগত বাঁধ, অপরিকল্পিতভাবে বহুতল নির্মাণ, পাহাড়ে জুমচাষ এবং নদীর গতিপথ পরিবর্তনের দরুন আরও সংকীর্ণ হয়ে এসেছে তাদের বাসস্থান। কাজেই সদ্য আবিষ্কৃত এই প্রজাতি যে অবলুপ্তির সম্মুখীন, তা নিয়ে নতুন করে বলার নেই কিছুই…
আরও পড়ুন
চাঁদের বুকে ৬৭ লক্ষ প্রজাতির ‘স্পার্ম-ব্যাঙ্ক’!
Powered by Froala Editor