সনাতন পদার্থবিদ্যা সম্পূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে নিউটনের অভিকর্ষ বল এবং গতিবিদ্যার সূত্রের ওপরেই। সে-কারণেই কখনও কখনও পদার্থবিদ্যার এই ভাগকে নিউটনিয় পদার্থবিদ্যাও বলা হয়। তবে এবার সাম্প্রতিক আবিষ্কার রীতিমতো চ্যালেঞ্জ জানাল নিউটনের মহাকর্ষ সূত্রকে (Newton's Law)। অন্তত নক্ষত্রের মতো মহাজাগতিক বস্তুর জন্মের সময় বিঘ্নিত হয় মহাকর্ষ সূত্র, এমনটাই জানাচ্ছেন গবেষকরা।
সম্প্রতি রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির মাসিক জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণার মূল লক্ষ্য ছিল, ভাসমান গ্যাসপুঞ্জ থেকে নক্ষত্রের জন্মবৃত্তান্তের রহস্যোন্মোচন। সাধারণত, মহাজাগতিক গ্যাস পুঞ্জ অভিকর্ষের প্রভাবে ঘূর্ণনশক্তি লাভ করলে, তা ক্রমশ প্রসারিত হতে থাকে। পরবর্তীতে এই গ্যাসপুঞ্জ বা ক্লাস্টার থেকে প্রকাণ্ড গ্যাস কুণ্ডলী বিচ্ছিন্ন হয়ে জন্ম হয় নক্ষত্রের। জ্যোতির্বিদদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, কয়েক ডজন থেকে শুরু করে কয়েক হাজার নক্ষত্রের সৃষ্টি হতে পারে এই ধরনের প্রকাণ্ড ক্লাস্টার থেকে।
তবে অভিকর্ষের সূত্র মেনেই, মূল ক্লাস্টার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর যে-কোনো দিকে ছিটকে যেতে পারে না সদ্যোজাত নক্ষত্রেরা। এক্ষেত্রে বিষয়টা অনেকটা দড়ি টানাটানি খেলার মতোই। ক্লাস্টারের দুদিকে নক্ষত্রের ছিটকে যাওয়ার প্রবণতা সমান হয়। একইভাবে সমান হতে হয় দুদিকে ছিকটে যাওয়া নক্ষত্রদের মোট ভরও। গ্যাসপুঞ্জ বা ক্লাস্টার এই দুটি প্রান্তকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘টাইডাল টেইল’। অবশ্য এই পরিবর্তন খালি চোখে দেখা যায় না। কারণ, গ্যাসপুঞ্জ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এইধরনের নক্ষত্রমণ্ডল তৈরিতে সময় লেগে যায় কয়েক মিলিয়ন বছর।
গ্যাসপুঞ্জের এই প্রান্তভাগ নিয়েই গবেষণা করছিলেন বন বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলমোঞ্জ ইনস্টিটিউট অফ রেডিয়েশন অ্যান্ড নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের বিজ্ঞানীরা। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির গায়া স্পেস মিশনের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছিল ‘টাইডাল টেইল’ সংক্রান্ত তথ্য। সেই পরিসংখ্যানের ভিত্তিতেই সুপারকম্পিউটারে তৈরি করা হয় একটি বিশেষ মডেল। আর্টিফিয়াল ইন্টেলিজেন্সের এই সিমুলেশনেই উঠে আসে, ক্লাস্টারের দুই প্রান্তে অর্থাৎ দুই টাইডাল টেইলে নক্ষত্রের সংখ্যার তারতম্য রয়েছে। ক্লাস্টারের রেয়ার টেইল বা পিছনের প্রান্তের তুলনায় ফ্রন্ট টেইলের দিকেই ছিটকে যায় অধিকাংশ তারা। স্বাভাবিকভাবেই নিউটনের তত্ত্ব বিঘ্নিত হচ্ছে এক্ষেত্রে, এমনটাই দাবি গবেষকদের।
অবশ্য এই বিষয়টি নতুন কিছু নয়। কয়েক দশক আগেই, নিউটনের সূত্রকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ‘মডিফায়েড নিউটনিয়ান ডিনামিক্স’ নামের একটি গাণিতিক তত্ত্বের প্রস্তাব জানিয়েছিলেন একদল গবেষক। এবার সেই তত্ত্বেরই বাস্তবিক প্রমাণ পাওয়া গেল বলেই মনে করছেন বন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। তবে এই সূত্রকে স্থায়ীভাবে বই-এর পাতায় জায়গা দিতে এখনও দীর্ঘ গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলেই অভিমত তাঁদের…
Powered by Froala Editor