কোভিড থেকে সুস্থতায় ফিরলেও নিস্তার নেই পুরোপুরি। ঘাতক ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর অনেকের মধ্যেই দেখা গেছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। চিকিৎসকরা আগেই জানিয়েছিলেন কো-মর্বিডিটির কথা। কোভিডকে হার মানালেও হৃদযন্ত্র, কিডনি, লিভার কিংবা ফুসফুসের নানা সমস্যা দেখা যাচ্ছে আক্রান্তদের মধ্যে। এবার সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেল কোভিডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পড়ছে মানুষের স্নায়ুতন্ত্রেও। সংক্রমণের পর গুরুতর কোভিড আক্রান্তদের এক তৃতীয়াংশের মধ্যে মানসিক বা স্নায়বিক রোগ দেখা যাচ্ছে। এমনটাই দাবি করেছেন গবেষকরা।
ল্যানসেট সাইকিয়াট্রি পত্রিকায় সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২ লক্ষ ৩৬ হাজার রোগীর ডিজিটাল স্বাস্থ্য রেকর্ডের ওপর ভিত্তি করেই এই পরিসংখ্যান করা হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থা থেকে ফিরে আসা কোভিড আক্রান্তদের ৩৪ শতাংশের মধ্যেই দেখা গেছে মানসিক ও স্নায়বিক সমস্যা। তার মধ্যে ১৭ শতাংশ মানুষের মানসিক স্থিতি বেশ উদ্বেগের।
পরিসংখ্যান বলছে যাঁরা ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তি ছিলেন, তাঁরাই সবথেকে বেশি প্রভাবিত হয়েছেন। স্ট্রোক, ডিমেনশিয়া, ইনসোমনিয়া, মুড ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত হয়েছেন অনেকেই। কারোর আবার অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে মস্তিষ্কে। চিন্তার বিষয় হল, প্রতিটি রোগের প্রভাবই কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী। চিকিৎসকদের আশঙ্কা, আজীবন এই ব্যাধি বহন করতে হতে পারে আক্রান্তদের।
উল্লেখ্য, এই একই সংস্থা মাস তিনেক আগে আরেকটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল কোভিডের স্নায়বিক প্রভাব নিয়ে। আক্রান্তদের তিন মাস পর্যবেক্ষণে রাখার পর, তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল সেই গবেষণার জন্য। সেই রিপোর্ট ততটাও উদ্বেগজনক ছিল না। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার তিন থেকে ছ’মাসের মধ্যে আকস্মিক মোড় নিয়েছে রোগীদের স্নায়বিক অবস্থা। দীর্ঘ মেয়াদে আরও নতুন কী কী প্রভাব দেখা দেয়, বর্তমানে সেই বিষয়েই তথ্য সংগ্রহ করছেন বিজ্ঞানীরা।
আরও পড়ুন
টিকা নিলেই নিশ্চিন্ত নয়, আবারও ঘটতে পারে করোনা সংক্রমণ
তবে মহামারীর দ্বিতীয় তরঙ্গের ঢেউ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে যে-কোনো দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা। প্রাথমিক লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে ভ্যাকসিনেশন এবং আক্রান্তদের সুস্থতায় ফেরানো। আর তার মধ্যে উপেক্ষিত হচ্ছেন স্নায়বিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আক্রান্তরা। এই বিষয়টিকেও যে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত, সে বিষয়ে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। পরামর্শ দিয়েছেন, দ্বিস্তরীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিকাঠামো গঠন করার জন্য। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, ভারত কিংবা অন্যান্য তৃতীয় বিশ্বের দেশে এমন পরিষেবার ব্যবস্থা করা কতটা সম্ভব? এই বিষয়ে কতটাই বা গুরুত্ব দিচ্ছে ভারতের প্রশাসন? সেখানেই থেকে যাচ্ছে সংশয়…
আরও পড়ুন
গায়ত্রী জপে সারবে করোনা! এইমস-কে গবেষণার নির্দেশ কেন্দ্রের
Powered by Froala Editor