গত ১৩ জানুয়ারিই প্রকাশিত হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারের ২০২১ সালের ফরেস্ট রিপোর্ট। জানা গিয়েছিল বিগত দু’বছরে সামান্য হলেও বৃদ্ধি পেয়েছে অরণ্যাঞ্চলের পরিমাণ। সেই রিপোর্ট প্রাথমিকভাবে আশার আলাও দেখালেও সম্প্রতি প্রকাশ্যে এল আখেরে পরিবেশের লাভ হয়নি কিছুই। রিপোর্টের বিশ্লেষণে উঠে এল অরণ্যাঞ্চল বৃদ্ধি পেলেও হ্রাস পেয়েছে অরণ্যের পরিমাণ (Forest)।
ব্যাপারটা ঠিক বোধগম্য হল না নিশ্চয়ই? আদতে ফরেস্ট সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার (Forest Survey Of India) এই রিপোর্ট তৈরি করা হয় স্যাটালাইট ইমেজের মাধ্যমে। মূল ভূভাগের কতটা অংশ বৃক্ষ দ্বারা আচ্ছাদিত, তার জরিপের মাধ্যমেই নির্ণীত হয় বনভূমির পরিমাণ। সেই নিরিখে মূলত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে বনভূমিকে। যে সকল অঞ্চলের ৭০ শতাংশ বা তার বেশি অরণ্য দিয়ে আচ্ছাদিত, সেগুলিকে বলা হয় ঘন অরণ্যাঞ্চল। যেখানে বৃক্ষ-ছাউনির পরিমাণ ৪০-৭০ শতাংশের মধ্যে সেগুলিকে বলা হয় মাঝারি ঘন অরণ্য। অন্যদিকে এই আচ্ছাদন ১০-৪০ শতাংশের মধ্যে থাকলে তা বিবেচিত হয় উন্মুক্ত অরণ্য হিসাবে।
এই তিনটি বিভাগ মিলিয়েই মোট অরণ্যাঞ্চলের হিসেব করেন পরিসংখ্যানবিদরা। ফরেস্ট সার্ভের রিপোর্টের সেই কেবলমাত্র অংশটুকুতেই জোর দেওয়া হয়েছে। ভারতের মোট বনভূমির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ১৫৪০ বর্গ কিলোমিটার। যা বিগত ২ বছরের তুলনায় ০.২২ শতাংশ বেশি। কিন্তু লগিং, জলবসতি নির্মাণ এবং অন্যান্য কারণে ঘন বনভূমির আগের তুলনায় পাতলা হয়েছে অনেকটাই। সেই হিসেবে দেখতে গেলে ভারতে অরণ্যের পরিমাণ কমেছে ১৫১৮৩ বর্গ কিলমিটার। যা, নেট বৃদ্ধিরও প্রায় দশগুণ। এবং আরও আশঙ্কার বিষয় হল ৯১১৭ বর্গ কিলোমিটারের মাঝারি অরণ্য পরিণত হয়েছে উন্মুক্ত অরণ্যে।
তবে এটা কোনো নতুন ঘটনা নয়। ইন্ডিয়ান ফরেস্ট সার্ভে প্রতি দু’বছর অন্তর প্রকাশ করে এই রিপোর্ট। আর সেই রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৩ সাল থেকে টানা আট বছর ধরেই কমে চলেছে অরণ্যের পরিমাণ। এমনটা চলতে থাকলে, চলতি দশকের শেষে ভারত থেকে অবলুপ্ত হবে নাগাল্যান্ডের সমপরিমাণ অরণ্য। যা ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে পরিবেশে। সাম্প্রতিক এই বিশ্লেষণ ইতিমধ্যেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে বিজ্ঞানীমহলে। সিঁদুরে মেঘ দেখছেন পরিবেশকর্মীরাও। কিন্তু এহেন রিপোর্টের পরেও অরণ্য রক্ষায় আদৌ কি কোনো পদক্ষেপ নেবে কেন্দ্র? জানা নেই উত্তর…
আরও পড়ুন
৫০০ একর অরণ্য প্রত্যার্পণ উপজাতিদের
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
অরণ্য ফেরাতে ১৪ হাজার একর জমি ক্রয়, নজির গড়ল ডাচ সংস্থা