আড়াই লক্ষাধিক ‘গৃহহীন’ পাখিদের বাসায় ফিরিয়ে নজির দিল্লির ‘নেস্ট ম্যান’-এর

ভাঙাচোরা, পরিত্যক্ত একটা বাড়ি। অবহেলায় পড়ে থাকতে থাকতে, তার গায়ে ইতিউতি গজিয়ে উঠেছে গাছপালা। সেখানেই হাজার পাখিদের সংসার। তাদের কোলাহলেই মাত থাকে গোটা অঞ্চল। অফিস যাওয়ার পথে প্রতিদিনই এই দৃশ্য নজর কাড়ত তাঁর। ২০০৮ সাল। একদিন বুলডোজার এসে গুঁড়িয়ে দিল প্রাচীন স্থাপত্যটিকে। না, সেদিন আর অফিসে পৌঁছানো হয়নি তাঁর। এই ধ্বংসলীলা দেখে সোজা বাড়ি ফিরে এসেছিলেন তিনি। উদ্যোগ নিয়েছিলেন বাসা হারানো পাখিদের ঘরে ফেরানোর। 

রাকেশ ক্ষত্রী (Rakesh Khatri)। পেশায় আলোকচিত্রশিল্পী হলেও গোটা বিশ্বের কাছে আজ তিনি পরিচিত ‘নেস্টম্যান’ (Nest-man) নামেই। বিগত দেড় দশকে সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই লক্ষ পাখির বাসা বানিয়ে এক নজির তৈরি গড়েছেন দিল্লির এই বাসিন্দা। ওয়ার্ল্ড বুক, লিমকা-সহ একাধিক রেকর্ড, এনসাইক্লোপিডিয়া ও ‘ম্যাকমিলান’-ও সম্মাননা জানিয়েছে তাঁকে। এমনকি ম্যাকমিলানে তাঁকে নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে আস্ত একটি অধ্যায়। 

দিল্লির অশোক বিহারে বড়ো হয়ে ওঠা তাঁর। সাবেকি বাড়িতে পাখিদের আনাগোনা লেগেই থাকত। ঘুলঘুলিতে বাসা বাঁধত শালিক, চড়াই-সহ বহু ছোটো ছোটো পাখি। ফলে আলাদা করে পাখির বাসা তৈরির ব্যাপার কোনোদিনই সেইভাবে আসেনি তাঁর চিন্তায়। তবে ২০০৮ সালে দিল্লির সেই বাড়ি ভাঙার দৃশ্যটিই ভাবিয়ে তুলেছিল তাঁকে রাকেশ বুঝতে পারেন ধীরে ধীরে গোটা শহরটার ছবিই বদলে যাচ্ছে দ্রুত। পুরনো পরিকাঠামো ভেঙে নিত্যদিনই গজিয়ে উঠছে ফ্ল্যাট, মাল্টিপ্লেক্স। আর একটু একটু করে বাসস্থান কমে আসছে পাখিদের। 

সক্রিয় পরিবেশকর্মী হিসাবে পথে নামা সেই থেকেই। তবে নিঃসঙ্গভাবেই শুরু হয়েছিল সেই লড়াইটা। নিজের উদ্যোগেই বেতের কাঠামোয় চট আর খড়ের আস্তরণ দিয়ে আস্ত একটি পাখির বাসা তৈরি করে ব্যালকনিতে ঝুলিয়ে রাখেন রাকেশ। লক্ষ করেন, চারদিন পর সেখানে নতুন করে সংসার পেতেছে চড়াই। প্রথম উদ্যোগ সফল হতে আরও ২০টি এই ধরনের বাসা বানিয়ে দিল্লির বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে ঝুলিয়ে আসেন তিনি। 

তাঁর এই উদ্যোগকে প্রথমে পাগলামি বলেই মনে করেছিল পাড়া-প্রতিবেশীরা। তবে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসে সেই মানসিকতায়। একে একে পাখিদের বাসা বানিয়ে দেওয়ার অনুরোধ আসতে থাকে তাঁর কাছে। সেইসঙ্গে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, স্কুল থেকেও ডাক আসতে থাকে কর্মশালা আয়োজনের জন্য। শুধু দিল্লি নয়, ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে এমনকি বিদেশেও এই ধরনের কর্মশালার নেতৃত্ব দিয়েছেন রাকেশ। এখনও অবধি তাঁর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন প্রায় এক লক্ষ মানুষ। তাঁকে কেন্দ্র করেই দিল্লিতে গড়ে উঠেছে এক বৃহত্তর পাখি সংরক্ষণ কর্মসূচি। রাকেশ জানাচ্ছেন, প্রতি বাসা তৈরিতে আনুমানিক খরচ হয় মাত্র ২৫০ টাকা। 

তবে বাসা বানানোর ক্ষেত্রে এখনও নিয়মিত পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। প্রথাগত খড় আর বেতের বদলে বর্তমানে ব্যবহার করছেন টেট্রা প্যাক। আসলে পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণও নিয়ন্ত্রণে আসবে বলেই ধারণা তাঁর…

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More