দেখতে দেখতে করোনা অতিমারীর দ্বিতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়ছে সমস্ত নেপাল জুড়ে। গত একমাসে দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা বেড়েছে অন্তত ৩০ গুণ। হাসপাতালে হাসপাতালে রোগীরা শয্যা না পেয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন মেঝেতে বা সিঁড়ির মধ্যে। তবে সবচেয়ে যে জিনিসটার অভাব, তা অক্সিজেন। কয়েকটি প্ল্যান্টে মেডিক্যাল অক্সিজেনের উৎপাদন যদি বা হচ্ছে, তা বোতলবন্দি করার উপায় নেই। কারণ সিলিন্ডার অপ্রতুল। এই অবস্থায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল নেপালের পর্বতারোহী সমিতি। সম্প্রতি যে কয়েকটি অভিযাত্রী দল মাউন্ট এভারেস্ট এবং অন্যান্য পর্বতশৃঙ্গ জয়ে বেরিয়েছেন, তাঁদীর সঙ্গে থাকা অক্সিজেন ক্যান ও সিলিন্ডারগুলি পাহাড়ে ফেলে না এসে সঙ্গে করে ফেরত আনার নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। এর ফলে অন্তত ৩৫০০ অক্সিজেন সিলিন্ডারের চাহিদা পূরণ করা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
নেপালের অর্থনীতির সবচেয়ে বড়ো ভিত্তি পর্যটন ব্যবস্থা। আর পর্যটন শিল্পের আকর্ষণ তৈরি করেন এদেশের পর্বতারোহীরাই। করোনা পরবর্তী সময়ে এই শিল্পকে গতি দিতেই মার্চের শেষ থেকে পর্বতারোহণের কাজ শুরু করে নেপালের ন্যশানাল মাউন্টেনিয়ার অ্যাসোসিয়েশন। সমিতির হিসাব অনুযায়ী ৭০০ জন অভিযাত্রী বেশ কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে অভিযানে বেরিয়েছেন। এর মধ্যে বেশিরভাগেরই লক্ষ মাউন্ট এভারেস্ট। ইতিমধ্যে কয়েকটি দল এভারেস্ট জয় করেছে। তাঁদের সবার কাছে অয়ারলেসে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে, তাঁরা যেন অক্সিজেন ক্যান ও সিলিন্ডারগুলি পাহাড়ের গায়ে ফেলে না আসেন।
তবে এর পরেও পরিস্থিতির বিষয়ে একেবারেই আশাবাদী নন চিকিৎসকরা। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ। এর মধ্যে নেপালের দৈনিক করোনা সংক্রমণ ৯ হাজারের গণ্ডি ছাড়িয়েছে। এখনও পর্যন্ত চিকিৎসকরা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে গেলেও আর কিছুদিনের মধ্যেই সবটা হাতের বাইরে বেরিয়ে যাবে। এমনটাই আশঙ্কা স্বাস্থ্য মন্ত্রকের। যত দ্রুত সম্ভব, অন্তত ২৫ হাজার অক্সিজেন সিলিন্ডারের বন্দোবস্ত না করা গেলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। ইতিমধ্যে এর জন্য চিন সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদনও জানানো হয়েছে। চিন অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে। তবে যতদিন তা সম্ভব না হচ্ছে, ততদিন পর্বতারোহীদের ফেরত আনা সিলিন্ডার দিয়ে পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেওয়া যাবে নিশ্চই। সর্বস্তরের মানুষের এই ব্যাপক অংশগ্রহণই পারে অতিমারী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের আনতে।
Powered by Froala Editor