সারা পৃথিবী জুড়েই করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ছে ক্রমশ। আর সেইসঙ্গে ভেঙে পড়েছে বহু দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। ভারতের প্রায় সর্বত্র আক্রান্ত ব্যক্তিরা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে শয্যা পর্যন্ত পাচ্ছেন না। আর এবার একই দৃশ্য দেখা গেল প্রতিবেশী দেশ নেপালেও। হাসপাতালে শয্যা নেই, নেই ভ্যাকসিনের জোগানও। আর এই পরিস্থিতিতে একরকম হাত গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল নেপাল সরকার। শনিবার নেপালের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বিজ্ঞপ্তিতে কার্যত স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে, তাঁদের আর কিছুই করার নেই। এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষমতা নেপালের নেই।
শুক্রবার নেপালের দৈনিক সংক্রমণ ৫ হাজারের গণ্ডি ছাড়িয়ে যায়। শুধু তাই নয়, বিগত তিনদিন ধরে সংখ্যাটা ৪ হাজারের উপর ঘোরাফেরা করছে। নেপাল স্বাস্থ্য মন্ত্রকের রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রতিদিন যত মানুষ আরটিপিসিআর পরীক্ষা করাচ্ছেন, তাঁদের এক তৃতীয়াংশের শরীরেই করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে। আরও বহু মানুষ পরীক্ষা করাচ্ছেন না। ফলে সংক্রমণের প্রকৃত সংখ্যাটা আরও অনেক বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। এদিকে যতজন কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের চিকিৎসার জন্যও যথেষ্ট শয্যা নেই হাসপাতালে। ফলে খুব জটিল পরিস্থিতি না হলে মানুষকে বাড়ির মধ্যেই আইসোলেশনে থাকতে অনুরোধ জানিয়েছে মন্ত্রক।
অক্টোবর মাস থেকে নেপালে করোনা সংক্রমণ বেশ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ দৈনিক সংক্রমণের হার ৪০০-র নিচে নেমে আসে। এমনকি পৃথিবীজুড়ে দ্বিতীয় তরঙ্গের ঢেউ আছড়ে পড়লেও নেপালের পরিস্থিতি তেমন জটিল হয়ে পড়েনি। কিন্তু ভারতের বেশ কিছু রাজ্যে আংশিক লকডাউন শুরু হতেই নেপালে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। নেপালের বহু মানুষ ভারতের নানা রাজ্যে কাজ করেন। লকডাউন শুরু হতেই তাঁরা বাড়ি ফিরেছেন। আর পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে তাঁদের বেশিরভাগের শরীরেই করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এই কারণেই পরিস্থিতি হঠাৎ জটিল হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন নেপালের মানুষ। পাশাপাশি প্রশ্ন তুলছেন, সরকার কেন সময় থাকতে তাঁদের জন্য কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করেননি?
অন্যদিকে নেপালজুড়ে লকডাউনের পাশাপাশি ভ্যাকসিনেশন প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার কথাও জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। বলা হয়েছে, ভারত থেকে প্রথম দফায় যা প্রতিষেধক পাঠানো হয়েছিল সবই শেষ হয়ে গিয়েছে। এরপর সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ২০ লক্ষ ভায়াল ভ্যাকসিন অর্ডার দেওয়া হলেও যেহেতু ভারতেই ভ্যাকসিনের জোগান পর্যাপ্ত নেই তাই সেই অর্ডার কবে পৌঁছাবে তার ঠিক নেই। নেপালের এই কঠিন পরিস্থিতিতে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে না দিলে হয়তো সত্যিই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না।
আরও পড়ুন
করোনার একাধিক স্ট্রেন সক্রিয় ভারতে, হার মানছে অ্যান্টিবডিও
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয় না মস্তিষ্ক, প্রমাণ দিলেন গবেষকরা