একদিন দুদিন নয়, টানা ৪৭ দিনের কঠোর পরিশ্রম। পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টকে দূষণমুক্ত করে তোলার লড়াই। অবশেষে সেই লড়াইয়ে সাফল্য পেলেন নেপালের পর্বতারোহীরা। গতকাল নেপালের অভিযাত্রীদের একটি দল নেমে এসেছে এভারেস্টের চূড়া থেকে। সঙ্গে ২.২ মেট্রিকটন আবর্জনা। যার মধ্যে প্লাস্টিকজাত সামগ্রীর পরিমাণই সবচেয়ে বেশি। হ্যাঁ, ভয়ঙ্কর প্লাস্টিক দূষণের কবল থেকে রেহাই পায়নি পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গও। কিন্তু পর্বত যাঁদের কাছে ঈশ্বরের অপর নাম, তাঁরাই এবার এগিয়ে এলেন আবর্জনা অপসারণের কাজে।
করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন পর্বত অভিযান বন্ধ ছিল। ধীরে ধীরে আবার বরফের দরজা খুলছে। কিন্তু এক একটা অভিযান মানেই আরোহীদের ফেলে আসা নানা আবর্জনা আবারও ঢেকে ফেলবে হিমালয়কে। ঠিক এরকম সময়েই এভারেস্টের অভিযানপথে জমে থাকা আবর্জনা অপসারণের কাজ শুরু করেছিলেন পর্বতারোহীরা। সম্পূর্ণ প্রকল্পের আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে সুইৎজারল্যান্ডের একটি সংস্থা। ‘বালি পিক আউটলুক’ নামের এই প্রকল্পের মূল দায়িত্ব যদিও নিয়েছিলেন নেপালের পর্বতারোহীরাই। সঙ্গে পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিল নেপাল সরকার।
নেপালের পর্বতারোহী এবং পরিবেশকর্মী দাওয়া স্টিভেন শেরপার নেতৃত্বে ৪৭ দিন ধরে এভারেস্টের আনাচ কানাচ থেকে আবর্জনা সরিয়ে আনল অভিযাত্রী দলটি। দেখা গিয়েছে, অধিকাংশ আবর্জনাই প্লাস্টিকের তৈরি। হয় পরিত্যক্ত তাঁবু বা অন্য কোনো সরঞ্জাম। পর্বতের গায়ে দিনের পর দিন পড়ে থাকলেও এদের কোনো বিকৃতি হত না। কিন্তু প্লাস্টিকের উপস্থিতির কারণে বিঘ্নিত হবে পার্বত্য অঞ্চলের জীববৈচিত্র। এমনকি শৈবালের সংখ্যা কমে গেলে তুষারশৃঙ্গের ভবিষ্যতও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন দাওয়া।
২০০৮ সাল থেকেই পৃথিবীর নানা পর্বত থেকে আবর্জনা অপসারণের কাজ করছেন দাওয়া শেরপা। গতকালই তাঁর কাজ নিয়ে একটি তথ্যচিত্রও মুক্তি পেয়েছে। অবশ্য ২.২ মেট্রিকটন আবর্জনা আগে কোনো শৃঙ্গ থেকেই নামিয়ে আনেননি তিনি। দাওয়া শেরপার কথায়, এভারেস্ট তো শেরপাদের কাছে আজও সাগরমাথা। ঠিক যেন ঈশ্বরের আরেক নাম। যখন একটা একটা করে আবর্জনা তুলে নিচ্ছিলেন, তখন মনে হচ্ছিল ইশ্বরের শরীর থেকে কাঁটা সরাচ্ছেন। এখন তাঁদের ঈশ্বর নিরাপদ। এটাই এতদিনের পরিশ্রমের শেষে সবচেয়ে তৃপ্তির জায়গা।
আরও পড়ুন
এভারেস্টের পথে পড়ে থাকা আবর্জনা দিয়েই শিল্পসামগ্রী তৈরি নেপালে
Powered by Froala Editor