রাঁচি শহরের উপকণ্ঠে বাস ২৬ বছরের বিমলা মুণ্ডার। আদিবাসী সমাজের আর পাঁচজন মেয়ের মতো হয়ে থাকতে চাননি তিনি। সমাজের বৈষম্যের সঙ্গে লড়াই করে প্রতিষ্ঠিত হতে চেয়েছিলেন। সাফল্যও মিলেছিল অচিরেই। ক্যারাটের জগতে গুরুত্বপূর্ণ নাম হয়ে উঠেছিলেন বিমলা মুণ্ডা। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি যেন সবটাই ওলটপালট করে দিল। আবারও সেই সাধারণ জীবনেই ফিরে যেতে হল বিমলাকে। জীবন নির্বাহের জন্য বিমলার একমাত্র ভরসা বহু প্রজন্মের পচাই মদ বা রাইস বিয়ারের ব্যবসা।
ছোট থেকেই অন্যরকম হতে চাইতেন বিমলা। আর সেই সুযোগ এল ক্যারাটের হাত ধরে। প্রথম থেকে রাস্তাটা সহজ ছিল না। আদিবাসী হওয়ার কারণে নানা জায়গায় বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে তাঁকেও। তবে ২০১৫ সালে অল ইন্ডিয়া ক্যারাটে ওপেন চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণপদক পাওয়ার পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০১৯ সালে ফেডারেশন কাপেও স্বর্ণপদক পান। কিন্তু এর কিছুদিনের মধ্যেই করোনা মহামারী সেই যাত্রাপথের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াল। কোনো প্রতিযোগিতা তো নেইই, এমনকি ট্রেনিং বা অনুশীলনের ব্যবস্থাও নেই। বাধ্য হয়েই আদিবাসী সমাজের চিরাচরিত পেশাতেই ফিরতে হল তাঁকে।
বিমলার এই কাহিনি আবারও সমাজের বৈষম্যকেই হাজির করল। একদিকে অর্থনৈতিক বৈষম্য তো আছেই। অন্যদিকে সমাজ যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, আদিবাসী মহিলাদের অন্যরকম হওয়ার স্বপ্ন দেখাই যেন উচিৎ নয়। এমনকি দুস্থ ক্রীড়াবিদ হিসাবে সাহায্য মেলেনি সরকারের তরফেও। এই মহামারী পরিস্থিতি যেন এভাবেই সমাজের অন্ধকার দিকগুলিকেই সামনে এনে দিচ্ছে। অথচ দুঃসময় পেরোতে হবে হাতে হাত রেখেই।
Powered by Froala Editor