কোনোরকম কেন্দ্রীয় কর্মসূচি নেই। তবু জোট বেঁধেছেন সারা দেশের কৃষকরা। কোথাও রেল-রোকো তো কোথাও রাস্তা অবরোধ, যে যেভাবে পারছেন নিজের প্রতিবাদ ব্যক্ত করছেন। কোথাও আবার মোষের পিঠে চেপে রাস্তায় গ্রাম টহল দিচ্ছেন কৃষকরা। শুক্রবার সারা দিন ধরে এমন অজস্র দৃশ্যের সাক্ষী থাকল সারা দেশ। বছর দুয়েক আগে কৃষকদের এই মরণপণ লড়াইয়ের সম্ভাবনাই দেখা গিয়েছিল কৃষকদের ‘লং মার্চ’-এর মধ্যে। দীর্ঘ পথ হাঁটার ক্লান্তিতে শরীর ভেঙে পড়েছে, কারোর পা ক্ষতবিক্ষত। তবু থামেননি কেউই। সেই সম্ভাবনার দৃশ্যই আবারও মূর্ত হয়ে উঠল কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষিবিল বিরোধী আন্দোলনে।
দেশের ৩৫০টি কৃষক সংগঠনের মিলিত উদ্যোগে গড়ে উঠেছে সারা ভারত কৃষক সংঘর্ষ সমন্বয় কমিটি। তবে এই কমিটি কোনো প্রথাগত সংগঠন হয়ে ওঠেনি। হয়ে ওঠার সম্ভাবনাও হয়তো নেই, কারণ আন্দোলনের মূল রাশ তো অসংখ্য লড়াকু কৃষকের হাতে। অতএব তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়াই এই আন্দোলনের মূল শক্তি। কেন্দ্রীয় কমিটির তরফ থেকে শুধু একটি দিন বেছে নেওয়া হয়েছিল। ২৫ সেপ্টেম্বর। আর এই দিনটিকে মাথায় রেখে সারা দেশে নিজেদের মতো কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন কৃষকরা।
ধর্মতলার গান্ধীমূর্তির পাদদেশে কৃষকদের অবস্থান বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায় সকাল থেকেই। লকডাউনে ট্রেন চলাচল বন্ধ, তবু দূর দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন কৃষকরা। আর যাঁরা আসতে পারেননি, তাঁরা কর্মসূচি নিয়েছেন নিজেদের এলাকাতেই। বর্ধমান, জলপাইগুড়ি সর্বত্র পথে নেমেছেন কৃষকরা। হুগলিতে প্রধানমন্ত্রীর কুশপুতুল দাহ করা নিয়ে তৈরি হয় অশান্তির পরিবেশও। কিন্তু কোনো কিছুতেই পিছু হটতে রাজি নন তাঁরা। কলকাতায় কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে পথে নেমেছেন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাও।
তবে কৃষি-বিপ্লবের মাতৃভূমি পাঞ্জাব এবং হরিয়ানাতে কৃষকরা যেভাবে মরণপণ লড়াই শুরু করেছেন, তার নজির সারা দেশে পাওয়া যায়নি। কিছুদিন আগেই পাঞ্জাবের এক কৃষক এই বিলের প্রতিবাদে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। সেই আত্মত্যাগের আগুন যেন বাকিদেরও উত্তেজিত করে তুলেছে। ইতিমধ্যে তিনদিন হয়ে গেল, পাঞ্জাবের কৃষকরা রেল-রোকো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। বন্ধ সমস্ত স্পেশাল ট্রেন এবং মালগাড়ির চলাচল। হরিয়ানার প্রায় সমস্ত হাইওয়ে এইদিন চলে যায় কৃষকদের দখলে। রাজধানী দিল্লির সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তাঁরা। পুলিশের লাঠি বা কাঁদানি গ্যাস, কোনোকিছুরই তোয়াক্কা করেননি তাঁরা। এমনকি রাজধানীর বুকেও বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন অসংখ্য কৃষক। আর কৃষকদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন ঠিকা শ্রমিক এবং কারখানা শ্রমিকরাও। সরকারের আশা এবং অঙ্গনওয়ারি কর্মীরাও কৃষকদের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছেন।
এখনও কেন্দ্রের তরফ থেকে বারবার বলা হচ্ছে বিরোধীরা ভুল বোঝাচ্ছে কৃষকদের। এই বিলের ফলে শেষ পর্যন্ত তাঁদের সুবিধাই হবে। আবার বিরোধীদের দাবি, এই বিল শেষ পর্যন্ত কৃষকদের কর্পোরেটের চাকরে পরিণত করবে। তর্কবিতর্কে না গিয়েও বলা যায়, যেভাবে স্বতঃস্ফুর্তভাবে পথে নেমেছেন কৃষকরা তাতে শেষ পর্যন্ত বিল বাস্তবায়িত করা সত্যিই কঠিন হবে। গণতন্ত্রের মন্দির নামে পরিচিত পার্লামেন্টে বিরোধীদের স্বর দমন করে দেওয়া যায়, কিন্তু ঐক্যবদ্ধ কৃষকদের দমন করার মতো শক্তি কি কোনো সরকারের আছে?
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
দেশজুড়ে পথে নামছেন কৃষকেরা, কৃষি বিল কি পালে হাওয়া তুলে দিল বিরোধীদের?