গান্ধী জয়ন্তীতে ট্রেন্ডিং ‘নাথুরাম গডসে জিন্দাবাদ’ – ট্যুইটারজুড়ে হিংসার ইঙ্গিত

মানুষের জন্মদিন বা মৃত্যুদিনে ট্যুইটারে তাঁর নাম ট্রেন্ডিং থাকে। কিন্তু আজ তাঁর জন্মদিন বা মৃত্যুদিন কোনোটাই নয়। তবুও বেলা বাড়তে বাড়তেই ট্রেন্ডিং হয়ে উঠেছে তাঁর নাম। কেউ লিখেছেন ‘তিনি ভারতের প্রকৃত নায়ক’। কারোর কারোর মতে, ‘তিনিই দেশের প্রথম সন্ত্রাসবাদী। আজকের দিনে এমন সন্ত্রাসবাদীরই প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি’। না, নামটা আন্দাজ করা খুব কঠিন নয়। তিনি নাথুরাম গডসে (Nathuram Godse)। আজ গান্ধী জয়ন্তীর দিনেই গান্ধীজির হত্যাকারীকে নিয়ে মেতে উঠেছেন নেটিজেনরা।

ট্যুইটার ট্রেন্ডিং-এ কখনও দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসছে নাথুরাম গডসে জিন্দাবাদ হ্যাশট্যাগ। কখনও আবার পঞ্চম স্থানে চলে যাচ্ছে। তবে সবসময়ই প্রথম পাঁচের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। আজ বিকাল ৫টা পর্যন্ত ভারত থেকে অন্তত ২ লক্ষ ১২ হাজার ট্যুইটে ছিল এই হ্যাশট্যাগ। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগছে, কোন সময়ের মধ্যে এসে পড়েছি আমরা? তবে বিষয়টি বিচার করতে গেলে একটু গভীরে গিয়ে দেখা প্রয়োজন। সবচেয়ে ভালো করে বোঝা প্রয়োজন, ট্যুইটারে কোন হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ডিং দেখায়, এবং এর পিছনে সমীকরণটি ঠিক কীরকম।

সাধারণভাবে মনে হতে পারে, যে সবচেয়ে বেশি পোস্টে যে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে তাই ট্রেন্ডিং। অন্তত আভিধানিক অর্থ থেকে তেমনটাই মনে হয়। তবে ট্যুইটারের অ্যালগরিদম অনুযায়ী বিষয়টি ততটা সহজ নয়। আজকের দিনেই অন্তত ১৫টি হ্যাশট্যাগ ব্যবহৃত হয়েছে, যাদের পোস্টের সংখ্যা ‘নাথুরাম গডসে জিন্দাবাদ’-এর চেয়ে বেশি। কিন্তু ট্যুইটার ট্রেন্ডিং-এ আরও একটি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়। তা হল, একটি হ্যাশট্যাগ থেকে কত কম সময়ের মধ্যে কতগুলি পোস্ট যাচ্ছে। এক্ষেত্রে তাই পোস্টের সময়গুলি খেয়াল করা প্রয়োজন। সকাল ১০টা থেকে প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় নানা জায়গার অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা হয়েছে। এমনকি দেখা গিয়েছে এমন অনেক অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা হয়েছে, যা বিগত কয়েক মাস ধরে ব্যবহারই করা হয়নি। ফলে পুরো বিষয়টা যে পরিকল্পিত, তাতে সন্দেহ নেই।

তবে ২ লক্ষের উপর পোস্ট শুধুমাত্র রাজনৈতিক পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়েছে, এমনটা বিশ্বাস করা একটু কঠিন। গতবছর গান্ধী জয়ন্তীতেও ট্রেন্ডিং হয়ে উঠেছিল এই একই হ্যাশট্যাগ। আর সেদিন সারা দেশ থেকে ৮০ হাজার ট্যুইট করা হয়েছিল। এবছর সেই সংখ্যাটা ২ লক্ষ পেরিয়েছে। আর সমস্ত ট্যুইট যে কেবল গান্ধীবিদ্বেষী মানসিকতা থেকে, এমনটাও নয়। সেইসঙ্গে উঠে এসেছে ইসলামবিরোধী, ধর্মনিরপেক্ষতাবিরোধী, দলিতবিরোধী নানা ট্যুইটও। বস্তুত, এক ধরনের সার্বিক হিন্দুত্বের রোল মডেল হিসাবে তুলে আনা হচ্ছে নাথুরাম গডসেকে। আর ক্রমশ মানুষের মধ্যে সেই মতকে ছড়িয়ে দিতেও সক্ষম হচ্ছে হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলি।

অন্যদিকে দুপুরের পর থেকেই ট্যুইটারের ট্রেন্ডিং থেকে বাদ পড়েছে মহাত্মা গান্ধীর নাম। অথচ তালিকায় বেশ নিচের দিকে গেলে দেখা যাবে একের পর এক নানা হ্যাশট্যাগের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন গান্ধীজি। কেউ বাপুজি লিখেছেন, কেউ লিখেছেন গান্ধীজয়ন্তী। অন্যান্য নানা হ্যাশট্যাগের মধ্যে রয়েছে ‘সত্যাগ্রহ’, ‘ফাদার অফ নেশন’, ‘গান্ধী জিন্দাবাদ’, ইত্যাদি নানা কীওয়ার্ড। এই সমস্ত হ্যাশট্যাগের পোস্ট যোগ করলে তা ৮ লক্ষ ছাড়িয়ে যায়। অথচ এককভাবে একমাত্র গান্ধীজয়ন্তীর পোস্টের সংখ্যা ২ লক্ষ ১৫ হাজারের মতো। বাকি একটাও ৫০ হাজারের গণ্ডি পেরোতে পারেনি।

মানুষের মধ্যে গান্ধীবিদ্বেষী তথা হিংসাত্মক মানসিকতা প্রবলভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, এমনটা এখনই মনে করলে ভুল হবে। কিন্তু সেই পরিকল্পনা চলছে খুব সুচারুভাবেই। উলটোদিকে শান্তিকামী মানুষরা জোট বাঁধতে না পারলে এই সামাজিক অসুখকে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না।

Powered by Froala Editor

More From Author See More